ময়মনসিংহ, ১৬ জুলাই ২০২৫:
গতকাল রাত ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে ময়মনসিংহগামী জারিয়া লোকাল ট্রেনে একটি মারাত্মক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাটি ঘটার সময় ট্রেনটি মাত্র শম্ভুগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়েছিল এবং এর পরপরই ২ নম্বর বগিতে ৫ জন অস্ত্রধারী ডাকাত প্রবেশ করে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে, ডাকাতদের মধ্যে একজন ছিল মোটা ও খাটো গড়নের, উচ্চতা আনুমানিক ৫ ফুট ১-২ ইঞ্চি, এবং বাকি চারজন ছিল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তারা যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয় দেখিয়ে তাদের মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগীদের একজন জানান, “তাদের ৪ জনের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। আমার গলায় ছুরি ধরে যা আছে দিতে বলে। আমি টাকা দিলেও তারা নেয়নি। মোবাইলটি আগেই সিটের নিচে রেখে দিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে আমি প্রাণে বেঁচে ফিরেছি। কিন্তু বাকি যাত্রীদের সব কিছু লুটে নেয় তারা।”
তিনি আরও বলেন যে, ট্রেনটি শম্ভুগঞ্জ থেকে ছাড়ার পর অস্বাভাবিক ধীরগতিতে চলছিল, যা সাধারণত ব্রিজ পার হওয়ার সময় হয়ে থাকে। এতে সন্দেহ জন্মেছে ডাকাতির ঘটনায় চালকের সম্পৃক্ততা আছে কিনা।
এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী যাত্রী এবং স্থানীয়রা রেল কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “এই ঘটনার দায় কে নেবে? ট্রেনের পাশের বগিতে পুলিশ থাকলেও এত বড় ঘটনা কীভাবে ঘটে? যদি কেউ নিহত হতো, তাহলে কে দায়িত্ব নিত?”
রেলপথে যাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. প্রত্যেক বগিতে পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. নির্দিষ্ট সিট নাম্বার চালু করে টিকিট দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. ট্রেনে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন প্রকৃত দায়িত্ব পালন করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন যাত্রী পূর্বধলা উপজেলার নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ যাত্রীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, রাত্রিকালীন ট্রেনযাত্রায় সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য এবং নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেই গ্রহণ করার জন্য।
এই ঘটনার পর রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, এ ধরনের ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এই ধরণের ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিরোধের জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তদারকির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে যেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।