close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

জামায়াতের নেতৃত্বে নতুন জোটের গুঞ্জন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
এই খেলায় জামায়াতে ইসলামী ঘোড়ার মতো আড়াই চাল দিয়ে সবাইকে চমকে দিচ্ছে, এনসিপি তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটি আশ্রয়ের সন্ধান করছে এবং বিএনপি হাতির মতো সরাসরি চাল দিলেও মাঝে মাঝে থমকে যাচ্ছে।..

ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আটটি দলের একটি নতুন জোট গঠনের খবরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এই জোটের মূল দাবি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন, যা বিএনপিকে চাপের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মেরুকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতায়, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও ছয়টি ইসলামপন্থী ও সমমনা দলকে নিয়ে একটি নতুন জোট গঠনের গুঞ্জন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই জোটের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মতো চারটি মূল দাবি নিয়ে একটি যৌথ আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যদিও এনসিপির পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এই জোট গঠনের খবর অস্বীকার করা হয়েছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই অস্বীকারকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং এর পেছনে এক গভীর রাজনৈতিক সমীকরণ লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন।

এই জোট গঠনের পেছনে প্রতিটি দলেরই নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ এবং কৌশল জড়িত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনে এনসিপির ছাত্র সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পর দলটির জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ভয়েই এনসিপি এখন জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি শক্তিশালী ও সংগঠিত দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার পথে হাঁটছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ডাকসু নির্বাচনে তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের বিজয়কে একটি বড় রাজনৈতিক অর্জন হিসেবে দেখছে এবং এই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে তারা জাতীয় রাজনীতিতে আবারও একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চায়।

এই জোটের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দাবিটি শুধুমাত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধেই নয়, বরং এটি পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কেও লক্ষ্য করে করা হয়েছে। কারণ, এই ধরনের একটি বড় সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য বিএনপির মতো একটি বৃহৎ দলের সমর্থন অপরিহার্য। এই দাবির মাধ্যমে জামায়াত এবং তার সহযোগীরা বিএনপিকে চাপের মুখে ফেলে নির্বাচনী দর-কষাকষিতে নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। এছাড়াও, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিও এই জোটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

এই জোট গঠন নিয়ে সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি এতদিন নিজেদেরকে একটি প্রগতিশীল এবং মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসলেও, জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি রক্ষণশীল দলের সঙ্গে তাদের জোট গঠনের সম্ভাবনা দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক তীব্র আদর্শিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এটিকে ‘আদর্শিক আত্মসমর্পণ’ হিসেবে দেখছেন। তবে, বাংলাদেশের রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায় এককভাবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব জেনেই, এনসিপি হয়তো এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে।

অন্যদিকে, এই নতুন জোট যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তবে কৌশলগতভাবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে জামায়াতে ইসলামী। এনসিপির সঙ্গে জোট করার মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারবে, তেমনই অন্যদিকে অন্যান্য দেওবন্দী ইসলামী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তারা ধর্মীয় অঙ্গনেও তাদের legitimacy বা বৈধতা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। জামায়াতে ইসলামীর শক্তিশালী আর্থিক, প্রশাসনিক এবং আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে তারাই যে এই জোটের মূল চালিকাশক্তি হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন এক জটিল দাবার ছকের মতো, যেখানে প্রতিটি দলই তাদের নিজস্ব চাল দিয়ে প্রতিপক্ষকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই খেলায় জামায়াতে ইসলামী ঘোড়ার মতো আড়াই চাল দিয়ে সবাইকে চমকে দিচ্ছে, এনসিপি তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটি আশ্রয়ের সন্ধান করছে এবং বিএনপি হাতির মতো সরাসরি চাল দিলেও মাঝে মাঝে থমকে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই খেলার সময় নির্ধারকের ভূমিকা পালন করলেও, মাঠের মূল খেলোয়াড় এখন এই দলগুলোই। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে এই নতুন জোট যদি সত্যিই আত্মপ্রকাশ করে, তবে তা হবে গত পাঁচ দশকে জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অর্জন। এই জটিল সমীকরণে বিএনপি কি আটকা পড়বে, নাকি তাদের হাতেও কোনো গোপন চাল রয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্যই এখন অপেক্ষা করছে পুরো দেশ।

Walang nakitang komento


News Card Generator