হরতাল-অবরোধে স্থবির হয়ে পড়ে ব্যস্ত নগরী মোংলা।
রোববার (২৪ আগষ্ট) সারাদিন কাঠরগুড়ি, বাঁশ, বেরিকেড দিয়ে ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। একই দিন আসন পুনর্বহালের দাবিতে করা হয় বিক্ষোভ মিছিলও। এদিকে হরতাল-অবরোধে কর্মজীবীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। সরেজমিন দেখা যায়, রবিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে কর্মস্থলের উদ্দেশে মানুষ বাসা থেকে বের হলেও অফিসগুলোতে যেতে বাধা পোহাতে হয়।মোংলা বাজার মাছ ও সবজির বাজার ছাড়া এলাকায় কোন দোকানপাট খোলেনি।সকল যান চলাচল দিনভর বন্ধ ছিল।
মোংলাসহ কাটাখালী, নওয়াপাড়া, দিগরাজ, সাইনবোর্ড, মোল্লাহাট ও ফকিরহাটসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে চলছে সর্বদলীয় সর্বাত্মক অবরোধ। ফলে ওই রাস্তাগামী যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা মূল সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। তৈরী হয় তীব্র যানজট। একপর্যায়ে অফিসগামীরা তাদের গন্তব্যে না পৌঁছে বাড়িতে ফিরে যায়। এ অবরোধে বাগেরহাট থেকে খুলনা-মাওয়া-ঢাকা রুট অচল হয়ে পড়েছে। এতে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাগেরহাট।
অবরোধ সফল করতে ভোর থেকেই রাস্তায় নেমে এসেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। অবরোধের কারণে বাগেরহাটের কোনো উপজেলা থেকেই ভোরে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। চলছে না অভ্যন্তরীণ যানও।
এদিন ভোর থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করলেও সকাল ১০টার দিকে মোংলা-দিগরাজের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করতে দেখা যায়। এ সময় আন্দোলনরতদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শুধু রোগী বা অ্যাম্বুলেন্স দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে অনেক চাকরিজীবী সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেননি।
বেসরকারী চাকরিজীবীরা বলেন, সকালে মোটরসাইকেল যোগে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিলেও আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে বাসায় ফিরে আসতে হয়। একদিনের বেতন কাটা যাবে। অফিস তো আর আন্দোলনের অজুহাত শুনবে না। চলমান অবরোধের প্রতি নিরব সমর্থন আমজনতার। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া অবরোধে রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অল্প সংখ্যক গাড়ি বের হলেও তা স্থানীয় অবস্থানে চলাচল করে। এরকম পরিস্থিতিতে অবরোধে নড়েবড়ে মোংলার স্থানীয় অর্থনীতি।
এদিকে অর্থনীতিতে দারুণ অবদান রাখা মোংলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোও পর্যটক খরায় ভুগছে। ফলে সেখানকার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের জীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। প্রত্যাশিত পর্যটক না থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা।
বেসরকারি অফিসের ককর্মিরা বলেন, এসব আন্দোলন কবে শেষ হবে জানি না। আমাদের এই জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে হলেও সিইসির সিন্ধান্ত বদল করা উচিত।
মোংলা পৌর সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহবায়ক ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. জুলফিকার আলী বলেন, অবরোধ সফল করতে ভোর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোংলা নদীর খেয়া পারাপার ও ফেরি চলাচল। এতে এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে ইপিজেড। আর সড়ক পথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সকল কল কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র জরুরি সেবা চালু রয়েছে। আসন ফিরে পাওয়ার দাবিতে বাগেরহাটের সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি সর্বাত্মক এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই ইসি বাগেরহাট-৪ আসন বিলুপ্তি ও বাগেরহাট-৩ আসনকে বিভাজনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। বাগেরহাটের একটি আসন কেটে গাজীপুরে আরেকটি আসন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইসির এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও আসন পুনর্বহালের দাবিতে ৩০ জুলাইয়ের পর থেকে বাগেরহাটজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি।