ঘুষ বাণিজ্যে রমরমা শ্রীপুর মডেল থানা : আসামী ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে..

Md Sale avatar   
Md Sale
ঘুষ বাণিজ্যে রমরমা শ্রীপুর মডেল থানা : আসামী ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে




> গভীর রাতে আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তি
> দুই লাখ টাকায় মামলা হালকা হয়!
> ৫০ হাজার টা..

ঘুষ বাণিজ্যে রমরমা শ্রীপুর মডেল থানা : আসামী ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

 

> গভীর রাতে আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তি
> দুই লাখ টাকায় মামলা হালকা হয়!
> ৫০ হাজার টাকায় মাদক ব্যবসায়ীর মুক্তি!
> জুলাই হত্যা মামলার আসামী মারামারির মামলায়!

 

গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিকের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে থানা হেফাজত থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাপাসিয়া থেকে শ্রীপুর থানায় বদলি হয়ে মাত্র ৫ মাসে তিনি শ্রীপুর থানাকে ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। ঘুষ দিলে জুলাই হত্যা মামলার আসামীকেও মারামারির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দেন তিনি। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের যত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেন, সবার পরিবারের কাছ থেকে মামরা হালকা করে দেওয়া এবং নতুন মামলায় গ্রেপ্তার না দেখানোর অভয় দিয়ে নেন টাকা। 
আমাদের অনুসন্ধানে ওসি বারিকের ঘুষকান্ডের বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ভয়ভীতির মধ্যেও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ওসি বারিকের ঘুষকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছেন। তবে বেশিরভাগই থানা পুলিশের হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, এ নিয়ে এখন বক্তব্য দিলে আরও নির্যাতন নেমে আসবে। স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরের ৫ আগষ্ট কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শ্রীপুর থানায় ঘুষ কমেছিলো। মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিলো। কিন্তু ওসি বারিক আসার পর থেকে সেই পুরোনো কালচার শুরু করেন। এখন টাকা ছাড়া থানায় কোনো কাজ হয় না। ঘুষ আর মামলা বাণিজ্য এ থানায় এখন ওপেন সিক্রেট। 

 

গভীর রাতে আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তি:
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল চারটায় শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল আমীনকে গ্রেফতার করে শ্রীপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারের বিষয়টি ওসি আব্দুল বারিক সাংবাদিকদেরকে নিজেই নিশ্চিত করেন। নুরুল আমিন ওই এলাকার মৃত এমদাদ হোসেনের ছেলে। থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মোটা অংকের ঘুসের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে পরদিন নানা সামালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই লেখালেখি করেন। এ বিষয়ে ওসি আব্দুল বারিক জানান, ১ নম্বর সিএন্ডবি বাজার এলাকায় সরকারি কর্মচারীকে মারধরের সময় নুরুল আমীন চিল্লায় ছিলেন। তাছাড়া তার নাম থাকলেও তার পিতার নামের সাথে মিল নেই। তাছাড়া তার নামে কোনো জুলাই হত্যা মামলা নেই। এজন্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে । 

 

রাত তিনটার সময় দোষী নাকি নির্দোষ, এসব যাচাই-বাছাই করে হেফাজতে থাকা আসামি ছেড়ে দেয়ার সুযোগ আছে কি-না ? এমন প্রশ্নের উত্তরে গাজীপুর বারের সিনিয়র আইনজীবী আসাদুল্লাহ বাদল জানান, কোনো সুযোগ নেই। আসামি থানা হেফাজতে রেখে মধ্যরাতে দোষী না নির্দোষ, এসব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ওসির নয়, আদালতের। ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারলে অন্যান্য নামে এদিকসেদিক হলে সেটাও যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব আদালতের। জানতে চাইলে কালিয়াকৈর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য কি-না, জানি না। পুলিশ সুপারের নির্দেশে যাচাই-বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বলা হয়েছে । কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা ওসি বলতে পারবে। আমি জানি না, জেনে জানাতে পারবো। সার্বিক বিষয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোহাম্মদ যাবের সাদেককে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এসএমএস দিলেও তিনি রেসপন্স করেননি। 

 

দুই লাখ টাকায় মামলা হালকা হয়:
গত ৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ রাত ১০ টার দিকে ফারুক আহমেদ (৫০) নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে উজিলাব গ্রামের দিঘিরপার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন শ্রীপুর থানার এএসআই কামরুল ইসলাম। পরবর্তীতে আসামির স্বজনরা থানায় গিয়ে প্রথমে আসামিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। থানার গারদে একবার আসামি ঢুকলে ছাড়ার সুযোগ নেই জানালে মামলা হালকা করার প্রসঙ্গ উঠে। ওসির পক্ষ থেকে শুরুতে ৫ লাখ টাকা দাবি জানালেও পরবর্তীতে ২ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। এক হাজার টাকার নোট ১৩০ টি এবং পাঁচশত টাকার নোট ১৪০টি। টাকা লেনদেন হয় খোকন প্রধান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে । কিন্তু পরবর্তীতে কথা ও কাজে মিল রাখতে না পারায় ১ লাখ টাকা ফেরত দেন ওসি আব্দুল বারিক । আরও এক লাখ টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি কিছুদিন পর দেবেন বলে জানান। এই তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন একজন টেলিভিশন সাংবাদিক। তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বেশকিছু ভিডিও প্রমাণসহ প্রতিবেদককে দেন।

 

৫০ হাজার টাকায় মাদক ব্যবসায়ীর মুক্তি: 
অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীপুর থানার এসআই লতিফের নেতৃত্বে একটি পুলিশ ফোর্স অভিযান চালিয়ে গত ‘৩১ জুলাই ২০২৫’ তারিখ রাত ৯ টায় পৌর এলাকার বহেরার চালা (৯ নম্বর ওয়ার্ড) পাইলট মাঝির বাড়ি থেকে মারুফ নামের এক মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদক সেবনের সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে রাত ৩ টায় ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তাৎক্ষণিক এমন বক্তব্য জানিয়েছেন ঘুষের বিনিময়ে ছাড়া পাওয়া আসামি মারুফ। আসামি মারুফ মাওনা ইউনিয়নের বেলতলি গ্রামের আব্বাস আলীর সন্তান। তিনি মাদক মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আব্দুল বারিক জানান, ‘৫ জন লোক নিয়ে আসছিল। নিয়ে আসার পরে কারো কাছে কিছু পায় নাই। তো এই যে আমি কথা বইলা দিছিলাম। যদি কারোর কাছে কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে তো অযথা আটক করার প্রয়োজন নাই। তখন ওইডার নাম জানি না তো আমি, একটা মহিলাও ছিল। তিনজনে খায় স্বীকার করছে। একজন না দুইজন, দুইজন মনে ছাড়ছে। আমি বলে দিছি ছাইড়া দিতে। কোনো পয়সা-পাতি তো নেয়ার কথা না। তখন আমি ডাকছি, কোনো টাকা পয়সা নিছে কি-না ? ৫০ হাজার টাকা নিয়েছ প্রতিবেদকের নিকট প্রমাণ রয়েছে। এমন কথার পর তিনি (ওসি) বলেন, আচ্ছা আমি কথা বলে দেখতেছি।

 

জুলাই হত্যা মামলার আসামী মারামারির মামলায়:
অনুসন্ধান বলছে, ওসি আব্দুল বারিক রাজনৈতিক আসামি ধরে মারামারি মামলায় চালান দিয়েছেন। বিনিময়ে নিয়েছেন আড়াই লাখ টাকা ঘুষ। অথচ আসামীর বিরুদ্ধে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ১০ থেকে ১২টি মামলা রয়েছে। আসামীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহ ১১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনুর একান্ত সহকারী সায়েম কবিরকে কিছুদিন আগে শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন এসআই নাজমুল। গ্রেফতারের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত মামলা হালকা করার জন্য আসামির স্বজনদের সাথে থানার ভেতর চলে দেন-দরবার। ৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত আড়াই লাখে টাকায় রফাদফা হয়। এরমধ্যে অভিযান পরিচালনাকারী এসআই নাজমুল পান ২০ হাজার। জুলাই হত্যাকাণ্ডের ১০ থেকে ১২ টি মামলা থাকার পরও কেন মারামারির মামলা দেখানো হলো এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ওসি আব্দুল বারিক ও এসআই নাজমুল।

 

স্টাফ রিপোর্টার

গাজীপুর, শ্রীপুর

No se encontraron comentarios


News Card Generator