ফুটপাতে ‘জাদুর দোকান’: প্রাচীন রহস্যে মোড়ানো এক হকারের জীবন
সুমন হাওলাদার
আই নিউজ বিডি
স্থান: ঢাকা | ১৬ মে ২০২৫
ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় হেঁটে গেলে চোখে পড়ে এক বিশাল জগৎ—ফুটপাথের দোকান। কেউ বিক্রি করছেন জামাকাপড়, কেউ ফলমূল, আর কেউ মোবাইল কভার আর চার্জার। এসবের মাঝেই হঠাৎ চোখ আটকে যায় এক বৃদ্ধের দোকানে। না, এটা কোনো ফ্যাশনের পসরা নয়—এটা যেন সত্যি সত্যি এক ‘জাদুর দোকান’।
হাড়, নখ, শেকড়, ধাতু—সব কিছুতেই রহস্যের ছোঁয়া!
সরেজমিনে দেখা যায়, এক বৃদ্ধ ব্যক্তি সাদা চাদর বিছিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছেন। তার সামনে সাজানো নানা আজব বস্তু: পশুর দাঁত, কালো ঘোড়ার হাড়, গাছের শেকড়, ভাল্লুকের নখ আর চামড়া, হরিণের চামড়া, ব্যাঙের দাঁত (হ্যাঁ, ব্যাঙেরও দাঁত নাকি থাকে!)—এমনকি পুরোনো ধাতব মুদ্রা আর চেনের মতো গাঁথা উপাদানও রয়েছে। দেখে মনে হয়, যেকোনো সময় ‘হ্যারি পটার’ এসে এখান থেকে কিছু কিনে চলে যাবে!
এতসব সংগ্রহ তিনি নিজ হাতে কেটে, ছেঁটে, গুছিয়ে তাবিজ বানান। প্রতিটি তাবিজ বিক্রি করেন মাত্র ৫০ টাকায়। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন—মাত্র ৫০ টাকা! এক হাতে রহস্য, আরেক হাতে ছাড়!
“প্রতিটি জিনিসের পেছনে একটা কথা আছে”
বৃদ্ধ হকারটি বলেন, “মানুষ যা ফেলে দেয়, আমি সেগুলো থেকে মানে খুঁজি।” তার ভাষ্য অনুযায়ী, এসব জিনিস নাকি গায়েবি বিপদ থেকে রক্ষা করে, শরীরের নানা রোগেও কাজ দেয়। কে জানে, হয়তো সত্যিই কোনো লুকানো শক্তি আছে এসব শেকড়-বাকড়ের মধ্যে!
স্থানীয়দের মতে, তিনি একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি বা তান্ত্রিক—তবে তিনি নিজেকে বলেন “সংগ্রাহক”, যার কাজ হলো অর্থের চেয়ে অর্থ খুঁজে বের করা।
হারিয়ে যেতে বসা এক সংস্কৃতির চিহ্ন
শহরের এই প্রযুক্তিনির্ভর সময়ে, এমন পসরা আর খুব বেশি দেখা যায় না। হকার বললেন, “যারা বোঝে, তারাই দাম দেয়। অনেকেই তো শুধু গল্প শুনতেই আসে।” তার কাছে দোকান মানে শুধু বিক্রিবাটার জায়গা নয়—এটা তার জীবনের অংশ, ছোট্ট এক জাদুঘর।
চাকা লাগানো ট্রলি বা ঝকঝকে ব্যানার নয়, একখানা পুরোনো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রোজ আসেন। পেতে দেন সাদা চাদর, সাজিয়ে রাখেন বিস্ময়।
অন্যরকম এক শহুরে কাব্য
এই হকারের গল্প শুধু তার একার নয়। এটি ঢাকার অলিগলিতে হারিয়ে যাওয়া এক বিশেষ সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। যেখানে বাস্তবের সাথে মিশে থাকে বিশ্বাস, ব্যবসার সাথে কল্পনা, আর জীবিকার মাঝে থাকে শিল্প। শহরের কোলাহলে এমন মানুষরা যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সব সময় টাকা নয়, জীবনের দরকার একটা গল্পও।