এবার বিতর্কের কেন্দ্রে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি এবং প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। সাংবাদিক ইলিয়াসের মৃত মাকে নিয়ে সাবেক এমপি রনির একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, যা এখন আইনি লড়াইয়ের দিকে মোড় নিচ্ছে।
ঘটনার শুরু হয় যখন গোলাম মাওলা রনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের মাকে উদ্দেশ্য করে একটি অবমাননাকর ও আপত্তিকর পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি ইলিয়াসের মায়ের "যৌবনের কাল্পনিক চিত্র" বর্ণনা করেন এবং পুরো বিষয়টিকে একটি "রোমাঞ্চকর গল্প" হিসেবে আখ্যা দেন। এই পোস্ট মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এর জবাবে ইলিয়াস হোসেন তার ফেসবুক পেজে পাল্টা পোস্ট দিয়ে জানান, গোলাম মাওলা রনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, রনি যে মহিলার ছবি তার মা হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তিনি আসলে তার মা নন। ইলিয়াস জানান, ছবিটি অন্য কোনো সম্মানিত নারীর হতে পারে এবং তিনি ঐ নারীর পরিবারকে রনির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। একইসাথে তিনি রনিকে কয়েক দিনের মধ্যে জেলে পাঠানোর হুমকিও দেন।
এই বিতর্কের মাঝে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, গোলাম মাওলা রনি যে নারীর ছবি ব্যবহার করেছেন, তিনি আসলে মরিয়ম ওয়াহিদ নামে একজন খ্যাতনামা পাকিস্তানি-ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার ও শিল্পী। মরিয়ম তার শিল্পকর্মের জন্য ২০১৮ সালে "পোর্ট্রেট অফ ব্রিটেন" পুরস্কারও জিতেছিলেন। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীর ছবি ব্যবহার করে এমন কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেওয়ায় বিষয়টি নতুন মাত্রা পায়।
এই ঘটনায় নেটিজেন এবং অন্যান্য সাংবাদিকরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের রনির এই কর্মকাণ্ডকে "হীন মানসিকতার পরিচয়" বলে উল্লেখ করেন এবং একজন মৃত মা-কে নিয়ে এমন মন্তব্যের জন্য তাকে "পল্টিবাজ" বলে কঠোর সমালোচনা করেন।
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ আক্রমণ সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত উদাহরণ বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে ঘৃণা ছড়ানোর প্ল্যাটফর্মে পরিণত হচ্ছে।