এনসিপির জনসমর্থনে ভাটা? শেখ হাসিনার বক্তব্যে পরাজয়ের ভয় স্পষ্ট..

Md Azhar Uddin avatar   
Md Azhar Uddin
নববর্ষের দিনে এনসিপির কর্মসূচিতে স্বল্প জনসমাগম দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, অন্যদিকে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যে পরাজয়ের গ্লানি ও ভয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।..

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জনসমর্থন এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সম্প্রতি নববর্ষের দিনে ঢাকায় আয়োজিত এক কর্মসূচিতে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের সময় স্বল্প সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা দলটির সাংগঠনিক শক্তি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এক ধরনের সংশয় তৈরি করেছে, যা নিয়ে দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরাও উদ্বিগ্ন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও দিনটি নববর্ষ ছিল এবং ঢাকায় আরও অনেক অনুষ্ঠান চলছিল, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে পরিচিত একটি নতুন দলের কর্মসূচিতে আরও বেশি জনসমাগম প্রত্যাশিত ছিল। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাম্প্রতিক কিছু টেলিভিশন টকশোতে দেওয়া বক্তব্য এবং বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়াকেও জনসমর্থন না বাড়ার একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এনসিপি মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের রাজনীতি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে: একটি হলো 'সংস্কার', যা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সাড়া ফেলেছে, এবং অন্যটি হলো বিগত ১৫ বছরের শাসনামলের কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভকে পুঁজি করা। তবে, এই সংস্কারের এজেন্ডা যদি নির্বাচনকে বিলম্বিত করার একটি কৌশল হিসেবে প্রতীয়মান হয়, তবে তা দলটির বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

অন্যদিকে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সময়ের বক্তব্যগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার কথায় পরাজয়ের গ্লানি, হতাশা এবং এক ধরনের ভয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বারবার তার ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে ড. ইউনূসের ষড়যন্ত্রের যে তত্ত্ব দিচ্ছেন, সেটিকে একটি দুর্বল এবং ‘অবুদ্ধিদীপ্ত’ যুক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যে সরকার নিজেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, সেই সরকারের পতন কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হলে সাধারণ মানুষের খারাপ লাগার কোনো কারণ নেই।

শেখ হাসিনা তার শাসনামলের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে নিজের ‘অপরাধ’ ঢাকার যে চেষ্টা করছেন, তাও জনগণের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বিশেষ করে, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ের হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতাকে সরকারের ‘সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের’ ফল হিসেবে উল্লেখ করার পর থেকেই শেখ হাসিনার বক্তব্যে ভয়ের ছাপ আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি এখন দায় পুলিশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যা তার রাজনৈতিক পরাজয়েরই প্রতিফলন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করার একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।

No comments found