জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ১৯৭১ সালের চেতনাকে নতুন রূপে বহন করছে। তিনি বলেন, আজকের প্রজন্ম ’৭১-কে অতিক্রম করে একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বর্তমান প্রজন্ম শুধু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করছে না—তারা একে অতিক্রম করে ২০২৪ সালে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করেছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) তার নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে লিখেছেন, আমরা আগেই বলেছিলাম—২০২৪ সাল আসলে ১৯৭১-এরই ধারাবাহিকতা। কিন্তু এই ধারাবাহিকতা কেবল অতীতের পুনরাবৃত্তি নয়; বরং এটি ছিল এক নবজাগরণের সূচনা। ১৯৭১ সালে যেসব আকাঙ্ক্ষা ছিল—সমতা, ন্যায়বিচার, মর্যাদা—তা পূর্ণতা পেয়েছে ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, যখন মুজিববাদ ৭১-কে ভারতের প্রভাবে গড়ে তোলা এক ন্যারেটিভে বন্দী করতে চেয়েছিল, তখনই ২০২৪-এর অভ্যুত্থান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে ফিরিয়ে আনে। এটি ছিল কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও সাম্যের লড়াই।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন প্রজন্মের উদ্ভব হয়েছে, তারা কেবল রাজনৈতিক ইতিহাসের দর্শক নয়—তারা পরিবর্তনের অংশগ্রহণকারী এবং বিজয়ী। আমরা এখন আর ৭১-এর পক্ষে বা বিপক্ষে—এই পুরনো বিভাজনে ফিরতে চাই না। বরং আমরা চাই এক নতুন সূচনা, এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং সমতার ভিত্তিতে রাজনীতি হবে।
তিনি আরও বলেন, ৭১ থাকবে ইতিহাসে, রাষ্ট্রীয় ভিত্তি ও শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে। কিন্তু এটি আর রাজনৈতিক বৈধতার একমাত্র মানদণ্ড হবে না। একইভাবে ১৯৪৭ সালকেও আমরা ইতিহাস হিসেবে স্মরণ করব, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে নয়।
নাহিদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা আমাদের ইতিহাসের প্রশ্নগুলোর নিরসন করতে পারব। আমরা আলোচনা করব, বিতর্ক করব, কিন্তু তা হবে নতুন বাস্তবতার ভিত্তিতে। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো ২০২৪-কে ভিত্তি করে সামনে এগিয়ে যাওয়া, এবং পুরোনো অচল রাজনৈতিক কাঠামোকে প্রতিরোধ করা।
নাহিদ আরও বলেন, ২০২৪-এর অভ্যুত্থান কখনোই প্রতিশোধের জন্য ছিল না। এটি ছিল জাতীয় ঐক্য, সহমর্মিতা এবং ভবিষ্যতের প্রতি সম্মিলিত দায়বদ্ধতার প্রতীক। যারা এটিকে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তারা এর মর্ম উপলব্ধি করেনি।
শেষে তিনি বলেন, আজকের প্রজন্ম ৭১-কে সম্মান জানায়, কিন্তু তারা আর ৭১-কে পুঁজি করে পুরোনো বিভাজনে ফিরতে চায় না। তারা ২৪-কে কেন্দ্র করে এক নতুন রাজনৈতিক দিগন্তে এগিয়ে যেতে চায়, যেখানে থাকবে না প্রতিহিংসা, থাকবে কেবল ঐক্য ও পুনর্গঠন।