জুলাই অভ্যুত্থান দিবস এড়িয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ এবং পিটার হাস সংক্রান্ত গুজব নিয়ে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলছে। হাসনাত আবদুল্লাহ জানালেন, দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় তারা কষ্ট পেয়েছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে নানা কর্মসূচি পালিত হলেও, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতার আকস্মিক কক্সবাজার সফর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই দিনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত না থাকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, ছড়িয়েছে নানা গুজব। যদিও এনসিপি এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নেতারা সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এক দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি—গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ ও একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। এটি কোনো অপরাধ নয় বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর মানসিক প্রস্তুতিরই অংশ।” তিনি দাবি করেন, ৫ আগস্ট তার কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক দায়িত্ব ছিল না এবং দলের পক্ষ থেকেও তাকে কোনো কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও জানান, ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ তার কোচিং অফিসের একটি নম্বর থেকে ফোন করে তাকে জানান যে, তিনি স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন এবং এনসিপির আহ্বায়ককে বিষয়টি জানানোর অনুরোধ করেন। এরপর নাসীরুদ্দীন রাতেই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি অবহিত করেন এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সঙ্গেও কথা বলেন। তখন জানা যায়, জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে তিনজন প্রতিনিধি থাকবেন, যার মধ্যে তিনি নেই। এসব তথ্য জানার পরই তিনি ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই সফরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তার স্ত্রীসহ সারজিস আলম ও তাসনীম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি। কিন্তু কক্সবাজার পৌঁছানোর পর একটি গুজব ছড়ায় যে, তারা নাকি ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে অস্বীকার করে নাসীরুদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার ভাষায়, "ঘুরতে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস সবসময় বৈঠকের টেবিলে সৃষ্টি হয় না, অনেক সময় নির্জনতা কিংবা প্রকৃতির কাছাকাছি অবস্থান থেকেই বড় ভাবনা জন্ম নেয়।"
দলের অপর শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে আরও স্পষ্ট করে জানান, দলের উচিত ছিল আমাদের পাশে দাঁড়ানো। গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া। কিন্তু তার পরিবর্তে আমাদের বিরুদ্ধে এমন ভাষায় শোকজ দেওয়া হয়েছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আরও উসকে দিয়েছে।
তিনি আরও লেখেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ প্রাণ দিয়েছে একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার আশায়, যেখানে স্বৈরাচারের স্থান থাকবে না। কিন্তু এই ঘোষণাপত্রে শহীদ পরিবার, আহত ও নেতৃত্বদানকারীদের মতামতের কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি। এমনকি তারা অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি।” তার মতে, এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে—সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের ওপর ন্যস্ত করতে চায় জনগণ। কিন্তু এটি মিথ্যা এবং একটি মৌলিক সংবিধান সংস্কারের পথে বড় বাধা।
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারেন, তাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেককেই এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গভীর হতাশা প্রকাশ করেন এবং সেই কারণেই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার ভাষায়, “যেখানে ঐক্যের বদলে বিভাজন, শহীদ ও আহতদের বদলে কিছু গোষ্ঠীর মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো প্রয়োজন আমি অনুভব করিনি।”
৫ আগস্ট, জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে অংশ না নিয়ে কক্সবাজার সফর করেন এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতা—নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা. তাসনীম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ। এ ঘটনা সামনে আসার পর দলীয় ফোরাম থেকে তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে এখন এনসিপির অভ্যন্তরেও প্রশ্ন উঠছে।