দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পিকনিক স্পট ‘জীবনমহল’ পার্কে অনৈতিক ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে তৌহিদী জনতা।
বৃহস্পতিবার ২৮ আগষ্ঠ দুপুর ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত ঘন্টা ব্যাপী তৌহিদী জনতার ব্যানারে হাজারো মানুষ পিকনিক স্পটের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে জীবনমহলে অসামাজিক কার্যকলাপ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছিল। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং বৃহস্পতিবার সেই ক্ষোভ সহিংস আকারে বিস্ফোরিত হয়। উত্তেজিত জনতা সংবাদকর্মীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ অন্তত ৮–১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।প্রথমে পুলিশ জনতাকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সেনা সদস্যরা ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িত কয়েকজনকে ঘটনাস্থল থেকে বের করে দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্থাপনা ভাঙচুর ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।বিক্ষোভকারীরা জীবনমহলের স্বত্বাধিকারী ড. আনোয়ার হোসেন জীবন চৌধুরীর গ্রেফতার দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। এতে দীর্ঘ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে তৌহিদী জনতা অবরোধ তুলে নেয়।
তৌহিদী জনতার পক্ষে মাওলানা হাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, “জীবন চৌধুরীর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে জীবনমহলে অসামাজিক কাজ ও দরবার শরীফের নামে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চলছে। আমরা শুধু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে গিয়েছিলাম, কিন্তু তার লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা আমাদের সাতজনকে আহত করেছে। পরে আমরা বাধ্য হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ করি।
নাইমুর রহমান নামে আরেক নেতা বলেন, “পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া এবং ছাত্রদের ওপর হামলা চালানোয় রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে। এরপর আমরা প্রতিবাদ করেছি।”তৌহিদী জনতার নেতা মতিউর রহমান কাসেমী জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনায় তাদের দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসন দাবি পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন মারুফ বলেন, “তৌহিদী জনতার কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। উভয় পক্ষ যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায় তবে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কোনো বীরত্বের কাজ নয়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছি। পরবর্তীতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, প্রশাসন ও উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” বর্তমানে ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সেনা মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, এবং তারা দ্রুত সমাধানের প্রত্যাশা করছেন।