জামালপুরের বকশীগঞ্জে মাত্র ২৬ দিনের বিবাহিত জীবনের পর ১৯ বছর বয়সী নববধূ মিলি আক্তারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার মেষেরচর পশ্চিম পাড়ায় স্বামীর বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
নিহত মিলি আক্তার ওই গ্রামের রোমান মিয়ার স্ত্রী এবং কাগমারি পাড়া গ্রামের ফকির আলীর মেয়ে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, রাতে খাবার খেয়ে মিলি নিজের ঘরে ঘুমাতে যান। সকালে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পাওয়ায় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান তারা।
তবে মিলির পরিবার থেকে এই দাবির বিরোধিতা করা হচ্ছে। নিহতের বাবা ফকির আলী অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। বিয়ের এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না।’
মিলির বড় ভাই মাহিন বললেন, “আমার বোন যদি আত্মহত্যাই করবে, তাহলে পুলিশ গিয়ে লাশ নামাতো। কিন্তু আমরা দেখেছি, বোনের মাথার বিভিন্ন অংশে এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ঘটনার পরপরই শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেন পালিয়ে গেলো? আমার বোনকে হত্যা করে গলায় ফাঁস দেওয়ার নাটক সাজানো হয়েছে।” তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বোন হত্যার বিচার দাবি করেছেন।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি এটি হত্যা হয়, তবে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সমাজকর্মী রুবিনা আক্তার বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সমাজে নারীর নিরাপত্তা এবং মর্যাদার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমাদের উচিত সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা।”
এলাকাবাসীরা জানান, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে। পুলিশ এ ব্যাপারে জনগণের সহায়তা চেয়েছে এবং আশ্বাস দিয়েছে যে তারা যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।