বিষম পিরিতি না শরীরি পিরিতি? প্রেমের গানে ‘ভিউ’-র নামে ভিজ্যুয়াল পাপ!
সুমন হাওলাদার
১৬ মে ২০২৫
একসময় প্রেমের গান মানে ছিল ভাঙা হৃদয়ের কান্না, চোখের জলে ভেজা চিঠি, আর শেষ ট্রেন মিস করা কোনো সেন্টিমেন্টাল দৃশ্য! আর এখন?
এখন প্রেমের গান মানে— ঠোঁট কামড়ানো, বুক ঝাঁকানো, গাল জুড়ে গ্লিটার, আর গানের নাম "বিষম পিরিতি"!
কিন্তু ভিডিও দেখে মনে হয়— বিষম নয়, ‘বিশেষ কামনার’ পূর্ণদৈর্ঘ্য বিজ্ঞাপন চলছে!
---
গানের কথা প্রেমের, কোরিওগ্রাফি প্রলোভনের!
"এ যে বিষম পিরিতি... বন্ধ মনের তালা চাবি আছে কই?"
এই লাইন শুনে মনে হয় কেউ সত্যিকারের হাহাকারে ডুবছে।
কিন্তু ভিডিও দেখে বোঝা যায়— তালা-চাবি তো বহুত পেছনের কথা, এখন দরজাটাই খোলা রেখেছে ক্যামেরার সামনে!
নাচ নেই, কিন্তু কোমর দুলছে। প্রেম নেই, কিন্তু ‘ভিউ’ বাড়ছে। এ যেন ভালোবাসার নামে ভাইরাল দেহবাজি!
---
ইতিহাস বলে বিষাদ, ভিডিও বলে ‘বিশ্রী’!
‘বিষম পিরিতি’র শেকড় কিন্তু হালকা নয়।
ডলি সায়ন্তনী গেয়েছিলেন ভারী গলায়, বিরহের সুরে।
আয়ুব আলীর কণ্ঠে ছিল বাউল ভাঙনের হাহাকার।
আর এখন? সেই গানেই ঢুকেছে স্লো-মোশন, ফিল্টার, ফ্লার্ট আর এক্সপ্রেশন-এক্সপ্লয়টেশন!
এক কথায়— গান আছে, গলা নেই। সুর আছে, কিন্তু শরম নেই!
---
ভিডিওর দৃশ্য: প্রেম নয়, পারফরমেন্স!
মডেল আসছেন— র্যাম্প নয়, ভিডিও!
চোখে কামনা, ঠোঁটে কামড়, শরীরে আলো।
লিরিকের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে লেন্সের অ্যাঙ্গেল।
নেটিজেনরা টিপ্পনী কেটেছেন:
"দেশের তাপমাত্রা কোন পর্যায়ে গেলে আন্ডারওয়্যার পরে গান হয়?"
"চোখ বন্ধ করলে গান, খুললে গ্ল্যামার শক!"
"পিরিতি তো বিষম, ভিডিও তো বিশ্রী!"
“দেখলে খারাপ, শুনলে আরাম— এমন গান চাই না রে ভাই!”
---
টিকটকের তরঙ্গে ভেসে গেল সংস্কৃতি!
কিছু গান এখন শুধু TikTok-এর ব্যাকগ্রাউন্ড নয়, বিবেকের ব্যাকআপ ডিলিট করতেও পারদর্শী!
একটি গানের নাম রেখে যখন কমেন্ট বক্সে শুধু লাল হার্ট, আগুন ইমোজি আর হাহা রিঅ্যাকশন ভাসে— তখন বুঝে নিতে হবে, ‘সংস্কৃতি’ শব্দটা এখন রিল ভিডিওর পরবর্তী শটে জায়গা পায়।
সাংস্কৃতিক বিশ্লেষকের ভাষায়—
"এটা গান না, এটা গ্ল্যামার-ড্রামা। প্রেমের হাহাকার নয়, শরীরের হালচাল!"
---
উপসংহার: বিষম পিরিতি নয়, বিষাক্ত প্রবণতা!
বাংলা গান আজকাল যেন “ভিউ, লাইক, কমেন্ট” নামের মোহে পড়ে গেছে আধা-নগ্ন ফ্যান্টাসির ফাঁদে।
শ্রোতা আজ গান শোনেন না, ‘গা’ দেখেন!
সংস্কৃতি যদি শরীরের প্যাকেজিংয়ে বন্দি হয়ে যায়, তবে প্রেমের গান হবে শুধু রিংটোনের নাম— যার শরীর থাকবে, আত্মা থাকবে না!
তাই এখনই সময়— প্রেমের গানে প্রেম ফেরানোর। নয়তো বিষম পিরিতি একদিন হয়ে উঠবে বিষাক্ত ঐতিহ্য।