বিশ্ব অর্থনীতি: ধীর গতিতে বেঁচে থাকা — অনিশ্চয়তা, বাণিজ্যবাধা ও বিনিয়োগ সংকট..

Taiyeb ibna Faruquei avatar   
Taiyeb ibna Faruquei
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সূচক বলতে আজকের বিশ্বকে আর “উদ্দীপক বৃদ্ধি” বলে ডাকা যাচ্ছে না — বরং এটি ধীর গতির এক অনিরাপদ পুনরুদ্ধারের পথে আছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি প্রায় *..

আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সূচক বলতে আজকের বিশ্বকে আর “উদ্দীপক বৃদ্ধি” বলে ডাকা যাচ্ছে না — বরং এটি ধীর গতির এক অনিরাপদ পুনরুদ্ধারের পথে আছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি প্রায় **৩.০ শতাংশ** হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক অবকাঠামো (IMF), যা সাম্প্রতিক আপডেটে পূর্ববর্তী অনুমানের তুলনায় সামান্য সংশোধিত হলেও মোটামুটি ক্ষুদ্র বৃদ্ধির চিত্রই নির্দেশ করে। 

 

বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ বলছে—দশকের গড়ে বিশ্বজুড়ে বাস্তব প্রবৃদ্ধি ওজনদারভাবে নিম্নমুখী; ২০২০ দশকটি প্রাক-উৎপাদন প্রত্যাশার তুলনায় সবচেয়ে দুর্বল হবে, আর দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের ওপর এ ধীরগতির ক্ষতিগ্রস্ত প্রভাব সবচেয়ে গুরুতর হবে। উন্নয়নশীল অর্থনীতি ছাড়াও বাণিজ্য-অবরোধ এবং নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানি ও বিনিয়োগ শক্তি কমে এসেছে। 

 

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথেঘাটার বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো বেসরকারি বিনিয়োগের দুর্বলতা। OECD-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী অনেক উন্নত অর্থনীতিতেই কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ঐতিহ্যগত স্তর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে; দীর্ঘমেয়াদি নীতি অনিশ্চয়তা ও শেয়ারহোল্ডার-মুখী নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বর্ধিত পুঁজি ব্যয় থেকে বিরত হচ্ছে। এ অবস্থা দেরিতে পুনরুদ্ধার হলে বৈশ্বিক বৃদ্ধি আরও পিছিয়ে যেতে পারে। 

 

ইউএস অর্থনীতি—বিশেষ করে—কিছু ক্ষেত্রে পুনরুদ্ধারচক্রকে জটিল করছে। সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিক ডেটা ও বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে আমেরিকার বৃদ্ধির গতি দ্বিতীয়ার্ধে ধীর হতে পারে; এ পরিস্থিতি ফেডারেল রিজার্ভের নীতি-পরিকল্পনাও প্রভাবিত করছে এবং ভবিষ্যতে মুদ্রানীতি শিথিলতা বা কঠোরতা সংক্রান্ত সন্দেহ বাড়িয়েছে। বিশ্ববাজারে এই নীতিগত সংকেতে ঝুঁকি-প্রিমিয়াম ও বিনিয়োগের পুনর্বিন্যাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

 

সবমিলে, বিশ্ব অর্থনীতি “দৃঢ় কিন্তু ভঙ্গুর” — এই ধারণা IMF-এর ভাষায় পাওয়া যায়; কিছু অঞ্চলে সাময়িকভাবে ইতিবাচক সংকেত থাকলেও বাণিজ্য-সম্পর্কিত ব্যাঘাত, উচ্চঋণশ্রেণি, ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও জলবায়ু-সংক্রান্ত ঝুঁকি মিলেই দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি রূপায়ণের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে নীতি নির্ধারকরা তিনটি প্রধান কাজ করতে বলছেন—(১) অবকাঠামো ও দক্ষতাভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়ানো, (২) বাণিজ্য অবরোধ ও বাজার-অবিচ্ছিন্নতা কমিয়ে আনা, (৩) ন্যূনতম দায়িত্বশীল বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। 

 

বাংলাদেশ ও অনুরূপ উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই বিশ্বব্যাপী ধীরগতি নেতিবাচক সঙ্কেত বহন করে—একদিকে রফতানির চাহিদা কমে গেলে প্রবৃদ্ধি ঝুঁকিতে থাকবে, অন্যদিকে তেল/কমোডিটি বা লজিস্টিক ব্যয় বেড়ে গেলে ক্রয়ক্ষমতা খর্ব হতে পারে। তাই বৈশ্বিক স্তরের নীতি-সামঞ্জস্য ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংস্কার একযোগে না হলে পুনরুদ্ধার আরও কঠিন হবে। (উপরের বিশ্লেষণে IMF, World Bank, OECD ও প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে)। 

 

No comments found