ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজারে নবনির্মিত ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্রের (LSFC) নিয়োগ ঘিরে চলছে তীব্র বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে— যোগ্য প্রার্থীকে উপেক্ষা করে প্রভাবশালী পরিবারের অযোগ্য সদস্যকে ‘ছলচাতুরির আশ্রয়’ নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই নিয়োগ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার ভিটিদাউদপুর গ্রামের মোঃ কেফায়েত উল্লাহ। একই এলাকার আরেক প্রার্থী সফলা আক্তারও লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের দপ্তরে। অভিযোগ, যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রহসন করে পূর্বনির্ধারিতভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়— যে কেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেই আউলিয়া বাজারে নিয়োগপ্রাপ্ত মোঃ সাদেকুল ইসলাম ভূইয়ার কোনো দোকান, অফিস বা ট্রেড লাইসেন্স নেই। অথচ তিনি নিয়োগ পেয়েছেন চম্পকনগর বাজারে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংক মালিক হিসেবে, যেটি এই ইউনিয়নের আওতাধীন নয়। তার পিতা চম্পকনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি— বিষয়টি স্থানীয়ভাবে এখন মুখরোচক আলোচনার কেন্দ্রে।
অভিযোগকারী কেফায়েত উল্লাহ জানান, “আমি গত ৫–৬ বছর ধরে এই বাজারে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ভূমি সংক্রান্ত সেবা দিয়ে আসছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার অফিস পরিদর্শন করে আমাকে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেখিয়ে গেছেন। তারপরেও রাজনৈতিক পরিচয়ধারী, দূরের গ্রামের একজনকে কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হলো— আমি বুঝতে পারছি না।”
তিনি আরও বলেন, “নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে বলা ছিল— ট্রেড লাইসেন্স বা নিজস্ব দোকান না থাকলে অবশ্যই বৈধ ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র থাকতে হবে। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীর কিছুই নেই। তাহলে প্রশ্ন— এই অনিয়মের ছত্রছায়া কার?”
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জেসমিন সুলতানা বলেন, “আমার জানামতে নিয়ম মেনেই নিয়োগ হয়েছে। তবে অভিযোগ যেহেতু এসেছে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজের প্রশ্ন:
কেবলমাত্র রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেই কি একজন অযোগ্য প্রার্থী সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকারি সুযোগ পাবেন? যেখানে একজন স্থানীয়, অভিজ্ঞ, জনগণকে বছরের পর বছর সেবা দিয়ে আসা প্রার্থী কেবল ‘সাধারণ’ বলেই বঞ্চিত হবেন?
এ ঘটনায় শুধু একজন প্রার্থীর নয়, আঘাত লেগেছে ‘ন্যায়ের’ উপর। এই অনিয়মের দায় শুধু একজনের নয়, পুরো সিস্টেমের। সাধারণ জনগণের প্রাণের দাবি— তদন্ত হোক খোলামেলা, এবং বিচার হোক নির্মোহ। নয়তো এমনকি ‘ভূমি সেবা’ও আর ‘সেবা’ থাকছে না, পরিণত হবে প্রভাবশালীদের একচ্ছত্র আয়োজনে।