ভরা মৌসুমেও ইলিশের খরা সন্ধ্যা নদীতে
মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ
নেছারাবাদ প্রতিনিধিঃ
ইলিশ মৌসুমের দুই মাস পার হয়ে গেলেও নদীতে প্রত্যাশিত ইলিশ মিলছে না। এ জন্য অনেক জেলে এখন পেশা ছেরে দিয়ে ঝুকছেন অন্যত্র।
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা, বরিশাল জেলার বানারিপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা নিয়ে ৬১ কিলোমিটার দির্ঘ সন্ধ্যা নদী।দেশের মিঠা মানির ইলিশের মধ্যে সবচাইতে স্বাধের ও সুন্দর গন্ধের জন্য দেশব্যাপী এ নদীর ইলিশের চাহিদা ব্যাপক।আর এ কারনে স্বাভাবিকের চাইতে এর দামও একটু বেশি থাকে বছর জুরে।নেছারাবাদ উপজেলা মৎস অফিস কর্মকর্তা ফারিয়া কনক জানান এ নদীর নেছারাবাদ অংশ থেকে বছরে ইলিশ মাছ আহরণ হয় আনুমানিক ২৫০ মে.টন। এ উপজেলায় ইলিশ মাছ ধরার সাথে ৮৫০ জন জেলে জড়িত রয়েছে।
এ নদীতে ইলিশের মৌসুমঃ যদিও বছরের ১২ মাসই এখানে ইলিশ মাছ আহরন করা হয়।প্রকৃত মাছ ধরার মৌসুম হয় বাংলা মাসের আষাঢ় থেকে আশ্বিন পর্যন্ত।এই চার মাসেই মোট আহরিত টার্গেটের তিন এর দুই ভাগ মাছ জেলেদের জালে উঠে আসে।কিন্ত চলতি বছর মৌসুমের দুই মাস পার হলেও প্রত্যাশিত মাছ আসছেনা জেলেদের জালে।
মাছ বিক্রয়ের স্থানঃ মিয়ারহাট,জগৎপট্টি, জলাবাড়ি,কামারকাঠি
বাজারের একাধিক মাছের আড়ৎদারদের সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির।মিয়ারহাটের আড়ৎদার সুনিল জানান
মিয়ারহাট বাজারে প্রতিদিন এ ভরা মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ কেজি মাছ উঠছে।যা গত বছর সর্বনিম্ন ছিলো ২০০ কেজি প্রতিদিন।সুনিল আরো বলেন নেছারাবাদের জগৎপট্টি বাজারে প্রতিদিন ৫০ কেজি সহ অন্য বাজারগুলোতে সর্বোচ্চ আরো ৫০ কেজি, এই মোট ১২৫ কেজি থেকে ১৫০ কেজি মাছ আসছে গত দের মাস ধরে। যেখানে এ এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা নদীর ইলিশের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১০০০ কেজি।
আড়ৎদার গৌতম বলেন সন্ধ্যা নদীর উজিরপুর উপজেলা অংশের মাছ হারতা বাজারে এবং কাজলা,বানারিপাড়া মিরেরহাট অংশের মাছ বানারিপাড়া বাজারে বিক্রি হয় আবার কিছু মাছ কাউখালি উপজেলার বাজারে বিক্রি হয়।এ বাজারগুলোতে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ কেজি মাছ বিক্রি হয় এখন।কিন্ত গত বছর এ সিজনে এ বাজারগুলোতে ১৫০০ থেকে ২০০০ কেজি এ নদীর মাছ বিক্রি হয়েছে।
ইলিশ মাছ খুচরা বিক্রেতা স্বপন বলেন মিয়ারহাট বাজারে আমরা ১৫ থেকে২০ জন ইলিশ মাছ বিক্রি করি। গত বছর এ মৌসুমে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেজি মাছ বিক্রি করেছি প্রত্যেকে। চলতি বছর সবাই মিলেও ৫০ কেজি মাছ জেলেদের কাছ থেকে পাইনা।
চাহিদাঃ বাংলাদেশ কনজুমার এসোসিয়েশন নেছারাবাদ উপজেলা সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন মিঠা পনির ইলিশের মধ্যে সবচাইতে স্বাধের এ নদীর ইলিশ।ভোক্তাদের চাহিদাও প্রচুর।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন নেছারাবাদে সন্ধ্যা নদীর ইলিশের স্বাধ নিতে।
জেলেদের কথাঃপ্রায় ২০ বছর ধরে মাছ ধরছি এ নদীতে।কিন্ত এ বছরের মতো খারাপ অবস্থা কখনও হয়নি।নদীতে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১০০০ জেলে নামে জাল নিয়ে।বেশির ভাগের জাল থাকে মাছ শুন্য।ফলে অনেক ইলিশ মাছ শিকারি এখন অন্য মাছ ধরার জাল ব্যবহার করেস আবার কেহ এ পেশা ছেরে দিয়ে অন্য পেশায় গিয়েছেন সংসার বাচাতে।নেছারাবাদ উপজেলা মৎসজীবি সংগঠনের সাবেক সম্পাদক কৌরিখাড়া গ্রামের মোঃ শহিদ বলেন গত বছর এ সময়ে শুধু নেছারাবাদ অংশের নদীতে ১ থেকে দের টন ইলিশ মাছ পাওয়া যেতো এখন ২০০ কেজিও পাওয়া যায়না।
মাছ কম হওয়ার কারনঃ
একাধিক জেলে বলেন বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে নদীতে প্রচুর পরিমানে বাধা জাল,বেহিন্দি জাল,ছান্দি জালের ব্যবহার হয় ছোটো মাছ ধরার জন্য।এসব জালে প্রচুর পরিমানে ইলিশের বাচ্চা উঠে আসে।এছারা চরগড়া দিয়ে মাছ ধরার কারনেও ইলিশের এ ভরা মৌসুমে মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে।
মৎসজীবি নরেন্দ্র দাস (৬২) বলেনএ বছর বন্যা কম হওয়ার কারনে মাছ কম।সাগর যত উত্তাল হয় নদীতে ইলিশ মাছের পরিমান তত বাড়ে।এ ছারা নিষিদ্ধ জালের কারনে মাছের পরিমান কম।
মৎস অফিসারের বক্তব্যঃ নেছারাবাদ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা ফারিয়া কণক জানান
মাছ না ওঠার অন্যতম কারন সন্ধ্যা এবং কচা নদীর মিলন স্থলে চর পড়ে যাচ্ছে। ইলিশ তার চলাচলস্থলে কোনও রকম বাধা পেলে মাইগ্রেটরি রুট পরিবর্তন করে। তাছাড়া অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযান পরিচালনা করা হলেও তারা অগোচরে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে যা ইলিশ প্রাপ্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারন হিসেবে তিনি জানান।