সম্প্রতি পাস হওয়া একটি নতুন বিলে দেশটিতে বাস্তব অর্থ বা 'রিয়েল মানি' জড়িত সব ধরনের অনলাইন গেম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় পড়েছে ফ্যান্টাসি ক্রিকেট, রামি, পোকার এবং বিভিন্ন বেটিং অ্যাপের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো। ভারতের এই কঠোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সাইবার অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এখানেও অনলাইন জুয়া এবং বেটিং অ্যাপের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
ভারতের সিদ্ধান্ত কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মতে, এই ধরনের অনলাইন গেমের কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঋণের বোঝা, মারাত্মক আসক্তি এবং আত্মহত্যার মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। এছাড়া কিছু গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের মতো ভয়াবহ তথ্যও সামনে এসেছে, যা এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে পরিণত করেছে। তাই জননিরাপত্তা ও জাতীয় সুরক্ষার কথা ভেবেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
শিল্পের জন্য অশনি সংকেত
সরকারের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে ভারতের বিকাশমান অনলাইন গেমিং শিল্প বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শিল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটিতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ রাতারাতি বেকার হয়ে পড়বে এবং সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হবে। তাদের মতে, কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই এমন একটি আইন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা এই শিল্পের বিকাশকে পুরোপুরি থামিয়ে দেবে।
বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?
ভারতের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। বাংলাদেশেও বর্তমানে তরুণদের মধ্যে ফ্যান্টাসি ক্রিকেট এবং বিভিন্ন বেটিং অ্যাপের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। প্রায়ই অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। অতীতে আমরা দেখেছি কীভাবে মেহেরপুরের মতো একটি জেলা অনলাইন জুয়ার 'রাজধানী'তে পরিণত হয়েছিল এবং এর পেছনে শক্তিশালী চক্র কাজ করছিল।
ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা দুটি বিষয় সামনে এনেছে:
১. কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা: অনলাইন জুয়ার বিস্তার রোধে শুধুমাত্র ছোটখাটো পদক্ষেপ বা কর আরোপ যথেষ্ট নয়। প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়নের পথেও হাঁটতে হতে পারে।
২. অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব: অন্যদিকে, একটি সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বিশাল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানে আঘাত হানতে পারে এবং একটি শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভারতে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে একটি কালোবাজার তৈরি হতে পারে, যেখানে ব্যবহারকারীরা আরও ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিয়ন্ত্রিত প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকবে। বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এখন প্রশ্ন হলো, অনলাইন জুয়ার এই ভয়াল থাবা থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে বাংলাদেশ কি ভারতের মতো কঠোর নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটবে, নাকি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান খুঁজবে? এই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের গতিপথ।