গাজীপুর জেলার সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় চারশ’ গ্রামজুড়ে বিস্তৃত ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিল রক্ষায় হাইকোর্ট তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা আদেশ দিয়েছেন। সোমবার (১১ আগস্ট) বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থমূলক মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেলা’র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।
তিনি জানান, বেলাই বিলটি প্রায় ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভরাট ও দূষণের শিকার। বিলটি রক্ষায় হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণ জানতে চেয়েছেন এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
বেলাই বিলের পরিবেশগত গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি একটি বিশাল জলাশয় যা স্থানীয় জনগণের জন্য জলজ সম্পদ সরবরাহ করে। কিন্তু নর্থসাউথ গ্রুপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রুপ, বাংলা মার্ক লিমিটেড, আমার বসতি ও ইন্টেলিজেন্ট কার্ডসহ কয়েকটি আবাসন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সাইনবোর্ড টানিয়ে মাটি ভরাট করছে। এছাড়াও একুতা ও মূলগাঁও অংশে প্রাণ কোম্পানি লিমিটেড এবং জয়দেবপুর এলাকায় এ এন্ড এ ট্রাউজার লি. এর সাইনবোর্ড রয়েছে।
বিলের মাঝের মাছের অভয়ারণ্য এলাকায় এ্যাকুয়া বিলাস রিসোর্ট ভরাটের পাশাপাশি দূষণ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে কচুরিপানায় বিলের পানি প্রবাহ কমে গিয়ে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ এই সমস্যাগুলোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তাদের জীবিকা নির্বাহে চরম সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
পরিবেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, বেলাই বিলের রক্ষা করা না গেলে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে। বিলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ সংস্থা এবং সাধারণ জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে।
আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না আরও জানান যে, হাইকোর্টের এই আদেশ বেলাই বিলের অবৈধ দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি পরিবেশ আন্দোলনে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। আশা করা হচ্ছে যে, স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে।