বাংলাদেশ এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়নি --খেলাফত আন্দোলন ..

GK Shohag avatar   
GK Shohag
জিকে সোহাগ, সিটি রিপোর্টার

ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষের অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দীর্ঘ ষোল বছরের দুঃশাসনের  অবসান হয়েছে। বাংলাদেশ এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, জনগণের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে মারকাজুল খেলাফত কামরাঙ্গীরচরে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে আলোচনা সভা ও দোয়ার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। 

জুলাই সনদে মাদ্রাসার ছাত্র ও আলেমদের অবদান সম্মানজনকভাবে উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জুলাই ছাত্র আন্দোলন ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং জালেম শাসকের বিরুদ্ধে মজলুম জনতার গণঅভ্যুত্থান। জুলাই আন্দোলনে  হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার এক দুঃসাহসিক রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো দেশ ও দেশের বাইরে সক্রিয় রয়েছে ।বাংলাদেশ বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের অবিলম্বে  চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সভায় অন্যান্য মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সানাউল্লাহ হাফেজ্জী, সংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন ও  প্রচার সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী প্রমুখ।

সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশমুক্ত হলেও এখনো বাংলাদেশে বৈষম্যমুক্ত হয়নি, ঘুষ দুর্নীতি জুলুম চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসলামী হুকুমত তথা কুরআন-সুন্নাহর শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া বৈষম্য দূর হবে না, জুলুম অত্যাচার বন্ধ হবে না, গণ মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। ২০১৩ সালের শাপলার গণহত্যাসহ ২০২৪ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী সরকারের সকল হত্যার দ্রুত বিচার এবং সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি অবিলম্বে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করার পথ সুগম করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মাওলানা সানাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন,২৪ শের  জুলাই এ ছাত্রদের আন্দোলন প্রথমদিকে বৈষম্য ও কোটাবিরোধী হলেও পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় একগম্বরের কারণে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয়। বিগত জুলাই বিপ্লবে সর্বস্তরের জনগণ গণআন্দোলনের মাধ্যমে এক ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে। আর কোনদিন যাতে নতুন কোন ফ্যাসিজম এদেশের প্রতিষ্ঠা হতে না পারে সে ব্যাপারে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লব কোন একক জন গোষ্ঠীর অর্জন নয়। স্কুল কলেজের ছাত্র- ছাত্রীদের সাথে দলমত নির্বিশেষে মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক ও সর্বস্তরের জনগণ মাঠে নেমেছিল। সেটা ছিল ১৬ বছরের মজলুম জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। 

তিনি আরও বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর রাষ্ট্রীয় গণহত্যা বরদাস্ত করতে না পেরে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সারা দেশের বিভিন্ন স্পটে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা  আন্দোলনে ছিলেন দৃশ্যমান। বিশেষ করে ৩ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর পুরো এলাকা ছিল মূলত মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করার কারণে অনেক মসজিদের ইমাম খতিব চাকরি হারিয়েছেন, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। আলেম ও মাদ্রাসার ছাত্রদের এই ত্যাগকে মূল্যায়ন করতে হবে।

আলোচনা শেষে ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা সহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ ও ইসলামের জন্য যারা শাহাদাত বরণ করেছেন  জান্নাতুল ফেরদাউসে তাদের সুউচ্চ মর্যাদা কামনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও সুস্থতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন আলোচনা সভার সভাপতি ও দলের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী। 

No comments found