close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বান্দরবানে সুয়ালকে বিদ্যুৎ ও সড়ক বিহীন ১৫০ পরিবার

MD Hasan avatar   
MD Hasan
মোঃ হাসান | বান্দরবান প্রতিনিধি :

যেখানে সরকারের নানা উদ্যোগে পার্বত্য জনপদগুলো আলোকিত হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ ও সড়ক উন্নয়নে, সেখানে বান্দরবান সদরের নিকটবর্তী ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড কাইচতলী ..

 

মোঃ হাসান | বান্দরবান প্রতিনিধি :

যেখানে সরকারের নানা উদ্যোগে পার্বত্য জনপদগুলো আলোকিত হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ ও সড়ক উন্নয়নে, সেখানে বান্দরবান সদরের নিকটবর্তী ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড কাইচতলী গ্রামের নয়াপাড়া পাড়া আজও পড়ে আছে উন্নয়নবিচ্ছিন্ন ও অন্ধকারে।

হলুদিয়া শহর থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে হলেও নয়াপাড়া পাড়ায় নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, নেই চলাচলের মতো সড়ক ব্যবস্থা। সন্ধ্যা নামলেই প্রায় ১৫০টি পরিবার হারিকেন কিংবা চেরাগের আলোয় দিন কাটায়। এর মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ২০টি পরিবারও রয়েছে।

হারিকেনের আলোয় শিক্ষার লড়াই
নয়াপাড়া গ্রামের জেএসসি পরীক্ষার্থী জিহান জানান,সন্ধ্যায় হারিকেন বা চেরাগ জ্বালিয়ে পড়তে হয়। তেল বা মোমবাতি শেষ হয়ে গেলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এতে রেজাল্ট খারাপ হয়।”

শুধু জিহান নয়, একই সমস্যার কথা জানায় পাড়ার আরও অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থী। বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছে।

সড়ক নেই, দুর্ভোগ চরমে

পাড়াটিতে এখনো কোনো পাকা সড়ক নেই। বর্ষাকালে চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। কাদা-পানিতে হাঁটাচলাই কঠিন হয়ে পড়ে। রোগী পরিবহন, জরুরি প্রয়োজনে শহরে যাতায়াত—সবই হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।

প্রবীণ বাসিন্দা ওমর আলী বলেন,
“৬০ বছর ধরে এই গ্রামে আছি। বিদ্যুৎ ও রাস্তার জন্য কতবার বলেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ছেলে-মেয়েরা কষ্ট করে লেখাপড়া করছে, কিন্তু সরকার যেন আমাদের কথা শুনেই না।”

ভুক্তভোগী গৃহবধূ সুমি আক্তার বলেন,
“রাত নামলে বাইরে বের হতে ভয় লাগে। মেয়েদের চলাফেরায়ও ঝুঁকি থাকে। বিদ্যুৎ আর ভালো রাস্তা হলে অনেক সমস্যা কমে যেত।”

নিজ খরচে সোলার প্যানেল, কিন্তু যথেষ্ট নয়

কিছু পরিবার নিজের টাকায় ছোট সোলার প্যানেল বসিয়েছে, তবে তা দিয়ে সীমিত সময়ের জন্য একটি-দুটি বাতিই জ্বালানো সম্ভব। ফ্যান, ফ্রিজ কিংবা ফোন চার্জ দেওয়ার মতো সুবিধাও নেই। ফলে স্বাস্থ্যসেবা, পড়ালেখা, যোগাযোগ—সব কিছুতেই সীমাহীন সমস্যা।

গ্রামবাসীর দাবি

নয়াপাড়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিগুলো হলো:

✅ দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান
✅ পাকা সড়ক নির্মাণ
✅ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা ও উন্নয়ন
✅ স্বাস্থ্যসেবা ও নেটওয়ার্ক সুবিধা সম্প্রসারণ

জনপ্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া

৪নং সুয়ালক ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য জনাবা কুলছুমা বেগম জানান,
“নয়াপাড়ার মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা ভেবে আমি ইতোমধ্যে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রাস্তার বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছি। রিসিভ কপিও সাংবাদিককে দিয়েছি।”

ইউপি চেয়ারম্যান উক্কুনু মার্মা বলেন,
“আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।”

বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাবা মারুফা সুলতানা খান হিরামনি,দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানটি পরিদর্শন করে।নতুন অর্থ বাজেট শুরু হলে উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।

বান্দরবান শহরের লাগোয়া নয়াপাড়া গ্রাম উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নেই বললেই চলে। প্রতিশ্রুতির পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে আছে বাস্তব উন্নয়নের আলো। এখন সময় এসেছে—সরকারি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই গ্রামকে উন্নয়নের ছোঁয়া দেওয়ার।

Walang nakitang komento