বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম পদক্ষেপ হলো, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের এবার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।'
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে সীমানা পুনর্নিধারণ বিষয়ে সম্ভাব্য জটিলতা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপদেষ্টা জানান, 'নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা যেন কোনও আইন বহির্ভূত কাজ না করে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।'
নির্বাচন উপলক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্ত বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, 'প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ১৩০টি ভেন্যুতে ২৮টি ব্যাচে তিনদিন মেয়াদী এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে।'
আনসার ভিডিপি সদস্যদের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। 'প্রাক নির্বাচনী প্রশিক্ষণ' শিরোনামে প্রতি কেন্দ্রে ১৩ জন হারে মোট ৫ লাখ ৮৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার জনকে অস্ত্রসহ এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার জনকে অস্ত্রবিহীন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বিজিবির ১১শ’ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্য এবং প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। বিজিবির ৬০% প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকিটা সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন।