আমেরিকার চাপ নাকি নির্বাচনী কৌশল? চীনের দিকে হঠাৎ কেন ঝুঁকছে মোদীর ভারত!..

Abdullah Al Mamun avatar   
Abdullah Al Mamun
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা: দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক শেষে আবারও চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে ভারত।..

প্রায় তিন বছর পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফর করেছেন এবং দীর্ঘ সাত বছর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চীন সফরের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে ভারতের এই নীতি পরিবর্তনের কারণ কী? এটি কি আমেরিকার ক্রমবর্ধমান চাপের ফল, নাকি ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের নতুন কোনো রাজনৈতিক চাল—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।

লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা কি তবে শেষ?

যদিও দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে, লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার পারদ এখনও নামেনি। দুই দেশের সেনাবাহিনী এখনও মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তারা খুব দ্রুত সৈন্য সমাবেশ করতে পারে, যা ভারতের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। সীমান্তে এমন উত্তেজনা জিইয়ে রেখে diplomatic আলোচনার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

"অপারেশন সিন্দুর" এবং ভারতের নীরবতা

আলোচনার টেবিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত "অপারেশন সিন্দুর" অভিযানে চীনের কথিত সহায়তা এবং এই বিষয়ে ভারতের রহস্যজনক নীরবতা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, মোদী সরকার তার ঘরোয়া রাজনীতিতে ফায়দা তোলার জন্য বৈদেশিক নীতিকে ব্যবহার করছে। বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনার ছবি দেখিয়ে দেশের মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হলেও, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বাস্তব অগ্রগতি কতটা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

"আর্লি হার্ভেস্ট" প্রস্তাবে ভারতের স্বার্থহানি?

চীন সীমান্ত সমস্যা সমাধানে "আর্লি হার্ভেস্ট" নামে একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ধাপে ধাপে, বিশেষ করে সিকিম সেক্টরের মতো ছোট ছোট অংশের বিরোধ মেটানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে আদতে চীনেরই লাভ হবে। এর মাধ্যমে ভুটানের ওপর চীনের প্রভাব বাড়বে এবং ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের (চিকেন'স নেক) ওপর চাপ সৃষ্টি হবে, যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।

বাণিজ্য ঘাটতি ও তাইওয়ান প্রশ্নে আপস

ভারতের দিক থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত বিষয় টেবিলেই রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে লাদাখে বাফার জোন তৈরি, ব্রহ্মপুত্র নদের জলের তথ্য শেয়ার এবং চীনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, চীন দাবি করছে যে ভারত তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছে। যদি এটি সত্যি হয়, তবে এটি হবে মোদী সরকারের একটি বিশাল কূটনৈতিক আপস, কারণ ভারত দীর্ঘদিন ধরে "এক-চীন" নীতি নিয়ে নীরবতা পালন করে আসছিল।

বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্য

ভারতের এই নীতি পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন বা উন্নতি—দুটিই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ভারত যদি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বেশি মনোযোগী হয়, তবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে দর-কষাকষির সুযোগ বাড়তে পারে। আবার, দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর সুসম্পর্ক এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতেও সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের কূটনীতিকরা নিশ্চয়ই দিল্লির এই পরিবর্তনশীল নীতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।

No comments found