লায়ন রাকেশ কুমার ঘোষ:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার পৌরসভায় অবস্থিত শ্রী শ্রী লোকনাথ সেবাশ্রম শান্তিবন মহাশ্মশাণ দখল চেষ্টার ঘটনার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। ঘটনার পিছনে সরকারের একজন কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগও এনেছেন তারা।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে এক সভা থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচি অনুযায়ি আখাউড়ার ২৫টি মন্দিরে শনিবার থেকে কালো পতাকা উত্তোলন করে রাখা হবে। দুর্গাপুজা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে। এরমধ্যে জায়গা দখলে চেষ্টাকারিরা সরে না দাঁড়ালে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনে পুজা বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে পুলিশের বাধায় সাময়িকভাবে দখল বন্ধ হলেও জায়গাটির সামনে বিভিন্ন মালামাল রাখা হয়েছে ঘর উঠানোর জন্য। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।
স্থানীয় একাাধিক সূত্র জানায়, একটি প্রভাবশালী মহল জায়গাটি দখলের পায়তারা করছেন। শ্মশাণের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকা ব্যক্তি ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জায়গাটি দখলের চেষ্টা করছেন। শত বছর ধরে এখানে শ্মশাণটি অবস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাধানগর কলেজ পাড়ার আনিসুর রহমান ভূইয়া নামে এক ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি রিট পিটিশনের আলোকে খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি চিহ্নিতকরণ কাজ শুরু করে উপজেলা ভূমি অফিস। বুধবার দুপুরে জমি পরিমাপ করে শ্মশাণের ভিতর লাল পতাকা টানানো হলে এতে কমিটির পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমি। সরকার শুধু নিজেদের জায়গার পরিমাপ করবে। সরকার এ জায়গা নিতে আসেনি। এ অবস্থায় পরিমাপ কার্যক্রম চলতে থাকে। এক পর্যায়ে আনিসুর রহমানের লোকজনের পক্ষ থেকে বলাবলি শুরু হয় খাস খতিয়ানের পরের অংশটুকু তাদের জায়গা। এ কথায় সায় দেয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র। প্রশাসনের পক্ষে পরিমাপ করে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় শ্মশাণের অভ্যন্তরে থাকা জায়গা দখলের জন্য টিন, বাঁশ নিয়ে আসা হয়। কমিটির মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ এসে এতে আপত্তি জানায়। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ বিষয়ে আহবান জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে শ্রী শ্রী রাধামাধব আখড়ায় প্রতিবাদ সভা আহবান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আখড়া পরিচালনা কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার ঘোষ। এতে পুজা উদযাপন পরিষদ, বিভিন্ন মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে করণীয় বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। এ সনয় দ্রুত লাল নিশান সরিয়ে নিতে প্রশাসনের প্রতি জোরালো আহবান জানানো হয়। পাশাপাশি আদালতের আদেশের অপব্যাখা না দিয়ে আসল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
সেবাশ্রম ও মহাশ্মশাণের পুজারি আশীষ ব্রহ্মচারি জানান, ২৭৫ ও ২৭৬ এ দুই দাগ দেবত্য সম্পত্তি, এ সাত তালা ভবনটি ২৭৫ ও ২৭৬ দাগের জায়গাতে, তৎকালীন শ্মশান কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ভয়বৃত্তি দেখিয়ে জোর করে করা হয়েছে। আনিসুর রহমান ও তার ভাইদের সঙ্গে শ্মশানের জমিসংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। ২০১৪ সালের একটি রিটপিটিশনের কথা বলে প্রশাসনের পক্ষে এখানে মাপজোঁক করা হয়। বিএস ম্যাপ অনুযায়ি শ্মশাণের কিছু জায়গা খাস খতিয়ানের বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সিএস আর আরোয়ার অনুযায়ি এটি ম্যাপে শ্মশাণের জায়গা। এ নিয়েও মামলা চলমান। রিটপিটিশনে শ্মশাণকে পক্ষ না করেই কৌশলে মিথ্যা তথ্য নিয়ে জায়গা পরিমাপের আদেশ আনানো হয়। যদিও এ আদেশ ওই সময়ই বাতিল হয়ে যায়। নতুন করে প্রশাসন কিভাবে আদেশ পেলো সেটি জানা নেই। প্রশাসনের এক কর্তা ব্যক্তি সরাসরি আনিসুর রহমানসহ প্রভাবশালীদের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি জায়গাটি তাদের দখলে দিতে অধনস্থদেরকে চাপ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে তারা আইনগতভাবে লড়বেন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রতিপক্ষ ঘর তোলার প্রস্তুতি নেওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
শ্মশাণ কমিটির সভাপতি হিরালাল সাহা বলেন, ‘জায়গা পরিমাপ বিষয়ে আমাদেরকে অবগত করা হয়নি। জায়গা নিয়ে মামলাও চলমান আছে। এ অবস্থায় খাস জমি চিহ্নিত করতে গিয়ে একটি পক্ষকে জায়গা দখলের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের যে কাগজপত্র আছে সেটি নিয়ে আমরা ইউএনও ও অ্যাসিল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন উচ্চ আদালতের আদেশে খাসজমি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু কাউকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তারা আদালতের শরণাপন্ন হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। দখলচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদেরকে আমরা আইনের আওতায় আনবো।
কয়েকবার ফোন দিয়ে আনিসুর রহমানকে পাওয়া পাওয়া যায় নি।
ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, ‘রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নির্দেশ অনুযায়ি খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা শুধু আদেশ পালন করেছি মাত্র। শ্মশাণের ভিতরে কিছু খাস জমি আছে। চাইলে শ্মশাণ কর্তৃপক্ষ এ জায়গার জন্য আবেদন করা বা অন্য কোনো উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে কাউকে কোনো জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।’