খুলনা প্রতিনিধিঃ
শরাফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব ও ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোরঞ্জন দাসের মার্কেটের টিউবওয়েল চুরির ঘটনায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ০৮নং শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি হত্যার প্রায় বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত আসামীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। উদ্ধার হয়নি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র। তদন্তের স্বার্থে কোন তথ্য দেয়নি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এজহার নামীয় আসামিদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেও হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততা থাকার কথা স্বীকার করেনি তারা। তবে জানা গেছে পুলিশ যে তথ্য পেয়েছে তাতে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত আসামিরা।
এদিকে গত ১মার্চ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন সকালে শরাফপুরের স্থানীয় কয়েক যুবক ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান রবি হত্যাকারী পাওয়া গেছে বলে মকবুল সিকদার নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন চোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় গণপিটুনি দিয়ে শিখিয়ে দেওয়া নাম বলতে বলে। ভিডিওতে দেখা যায় ঐ আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোরঞ্জন দাস উপস্থিত রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বানিয়াখালি বাজারের চা বিক্রেতা শাহাদাত খানের ছেলে ওবায়দুল খান চোর মকবুলের মাথায় পা দিয়ে মাটিতে চেপে ধরে। অপার দিকে কসাই ফারুক ও রাজু গাজী লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করছে।
জোরপূর্বক চোর মকবুলের স্বীকারোক্তি নিয়ে এরপর সাব্বির নামে এক যুবককে শরাফপুর বাজার থেকে ফিল্মি কায়দায় তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় গণপিটুনি দিয়ে চোখ উপরে ফেলার চেষ্টা চালাই তারা। এরপর মকবুলের মতই সাব্বিরের কাছ থেকে রবি হত্যা মামলার এজহার নামীয় আসামীদের নামের স্বীকারোক্তি নেয়। তাদের বেপোরোয়া পিটুনিতে প্রাণে বাঁচতে সাব্বির তাদের শিখিয়ে দেওয়া নামগুলো বলতে থাকে যেটির ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে যেয়ে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় ৬জনকে উদ্ধার করতে স্বক্ষম হয়।
চোর মকবুলকে চুরি মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। বাকি ৫জনকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় বর্তমানে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তারা।
আহত সাব্বির বলেন, আমি শরাফপুর বাজার গেছিলাম বন্ধুর সাথে দেখা করতে। ঐ খান থেকে দুইজন লোক আমাকে মোটরসাইকেলে করে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিয়ে দুই আড়াই ঘন্টা আমাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক মারপিট করে। আমার চোখের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে চোখ তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। আমাকে দিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান রবি হত্যার মিথ্যা স্বীকারোক্তি। আমি তাদের মারপিট সহ্য করতে না পেরে তাদের কথামতো স্বীকারোক্তি দেই। যেটি তারা ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। আমি এই সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে চাই এবং প্রশাসনের কাছে এদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
আহত সাবেক ইউপি সদস্য রফিক শেখ বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব ও ইউপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোরঞ্জন দাস থেকেই এই নাটক করেছে। ওবায়দুল হাওলাদারের সাথে নেতৃত্ব দেই বলেই আমাকে ওরা হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। ওরা এলাকার প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ক্ষতিগ্রস্ত রেজা বলেন, আমার বড় ছেলেকে নিয়ে আমি ঘেরে চুন দিতে গেছিলাম। ওইখানে আমাদেরকে ধাওয়া করলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। আমার ঘেরের বাসা ঐ সন্ত্রাসীরা পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়। প্রায় লক্ষ টাকার ক্ষতি করে তারা। আমি পথে বসে গেছি কিভাবে পরিবার দিয়ে চলবো। প্রশাসনের কাছে এই সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে শরাফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব ও ইউপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোরঞ্জন দাসের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নিহত রবিউল ইসলাম রবি'র স্ত্রী শায়লা ইরিনের করা হত্যা মামলার এজহার নামীয় প্রধান আসামী ওবাইদুল্লাহ হাওলাদার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মুঠোফোনে বলেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন আমার অপজিট পার্টি। তাদের পূর্বপরিকল্পিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাসুদ রানা জানান, গণপিটুনিতে প্রাণে বাঁচতে এক চোরের দেয়া স্বীকারোক্তিতে কিছু অতি উৎসাহী জনগণ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমরা জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি। উদ্ধারকৃত ৬ যুবকের মধ্যে মকবুল সিকদারকে চুরি মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আহত ব্যক্তিরা আইনি সহায়তা চাইলে তাদেরকে সহায়তা দেওয়া হবে।