দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ আগষ্ট) সকালে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন—খাল দখলকারী ও ভূমিদস্যুদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না, তাদের কারাগারে পাঠাতে হবে। আইন লঙ্ঘনের শাস্তি না হলে দখলচক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে।”
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রথমে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প হিসেবে প্রস্তাবিত হলেও পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে তা কমিয়ে ৩১৭ কোটি টাকায় আনা হয়েছে। তার মতে, অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দিয়ে এবং বাস্তবায়ন কাঠামো পরিবর্তনের ফলে ব্যয় কমেছে, তবে কার্যকারিতা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, একসময় এ খাল ছিল স্থানীয় কৃষি, মৎস্যচাষ ও নৌপথে চলাচলের প্রধান ভরসা। কিন্তু দখল, ভরাট ও অবৈধ স্থাপনার কারণে এর প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বর্ষা ছাড়া খালটি এখন দুর্গন্ধময় নর্দমায় পরিণত হয়। পুনঃখনন শেষে কৃষিজমিতে সেচ, বর্ষার পানি নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশের ভারসাম্য ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ শুভাঢ্যা খালটি চর কালীগঞ্জ থেকে রাজেন্দ্রপুর বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ প্রকল্পের কাজ করছে। খননের পাশাপাশি খালের দু’পাড়ে বাঁধ, ওয়াকওয়ে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, সেনাসদরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান, বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
স্থানীয়রা বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব বা আপসের মাধ্যমে যাতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগানগর এলাকার বাসিন্দা হাসিবুর রহমানের ভাষায়—'এই খাল বাঁচানো মানে কেরানীগঞ্জকে বাঁচানো। অতীতে যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়।'