close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

১৫ আগস্ট: শোক নাকি ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের নতুন খেলা?

আই নিউজ বিডি জাতীয় avatar   
আই নিউজ বিডি জাতীয়
অভিনেতাদের হঠাৎ আবেগ, নাকি অর্ডার করা পোস্ট?
প্রথম আলোর সাংস্কৃতিক সিন্ডিকেট
মনস্তাত্ত্বিক প্রচারণার নেপথ্যে কারা?
শোক দিবস নাকি ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন দিবস?..

ফ্যাসিবাদের পতনের এক বছর পর এসে ১৫ আগস্ট যেন একেবারেই ভিন্ন আবহে হাজির হলো। গত বছরের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে আর কোনো শোক দিবস পালিত হয়নি—এটাই ছিল স্বাভাবিক। কারণ, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ফ্যাসিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলা। আর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের দর্শনের আদর্শিক জনক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরা হয়।

তাহলে প্রশ্ন হলো—যেখানে জনগণের প্রত্যাশা ছিল একটি বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার, সেখানে হঠাৎ করে কেন এত তারকা, এত সাংস্কৃতিক মুখ একযোগে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে “শ্রদ্ধা” জানালেন? এটা কি নিছক আবেগ? নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কোনো সাংস্কৃতিক ষড়যন্ত্র?

এইবারের ১৫ আগস্টে ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছিল এক অদ্ভুত দৃশ্য। জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান, ঢালিউড কিং শাকিব খান, গায়ক কোনাল, অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ, কিংবা মডেল খায়রুল বাসার—প্রায় সবাই একই সুরে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শেখ মুজিবকে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এরা কেউই গত জুলাই বিপ্লবের সময় রাস্তায় দেখা যায়নি। এমনকি, শাকিব খান তো সবসময় রাজনীতির বাইরে থাকেন। হঠাৎ করে কেন তিনি শোক প্রকাশে এত সোচ্চার? উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়—ক’দিন আগেই মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে তাকে ডেকে এনে সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। তাহলে কি এটা পুরস্কারের প্রতিদান?

একই গল্প জয়া আহসানের ক্ষেত্রেও। তিনি বহু বছর ধরেই প্রথম আলোর ‘ঘরের মানুষ’। পুরস্কার হোক, প্রচ্ছদ হোক, বা অনুষ্ঠান—প্রথম আলো তাকে ছাড়ে না। এবারের শোকবার্তাও কি সেই ঘরানার প্রতি আনুগত্য?

বাংলাদেশের পাঠক সমাজে অনেকেই জানেন—প্রথম আলো শুধু একটি পত্রিকা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক। তাদের তৈরি করা “মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার” আসলে শিল্পীদের জন্য এক ধরনের আনুগত্যের পরীক্ষার মঞ্চ।

কে পুরস্কার পাবেন, কে আলোচনায় আসবেন—সব নির্ভর করে প্রথম আলোর প্রতি ভক্তি ও আনুগত্যের মাত্রার ওপর। এর মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে একদল তথাকথিত “অরাজনৈতিক” শিল্পী, যারা আসলে প্রথম আলোর সংকেত অনুযায়ী কাজ করে।

এবারও তাই হলো। ১৫ আগস্টে তাদের পোস্টগুলো একেবারেই একঘেয়ে ভাষায় লেখা। একই ধাঁচের শ্রদ্ধা, একই ধাঁচের আবেগ—যেন একজন বসে লিখে দিয়েছে, বাকিরা কপি-পেস্ট করেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো প্রচারণার নেপথ্যে ছিলেন একজন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক, যিনি দীর্ঘদিন প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এবং মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। তার স্ত্রীও একজন গায়িকা।

তার তত্ত্বাবধানেই কয়েকজন সেলিব্রেটিকে দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের জন্য সহানুভূতির বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তার সঙ্গী ছিলেন আরেক তরুণ উদ্যোক্তা, জাহের আলভী—যাকে নিয়েও প্রথম আলো সম্প্রতি ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে।

প্রশ্নটা এখানেই।
১৫ আগস্টের পোস্টগুলোতে কোথাও উল্লেখ ছিল না ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, রক্ষীবাহিনীর দমন-পীড়ন কিংবা একদলীয় শাসনের দুঃসহ স্মৃতি।
বরং শেখ মুজিবকে কেবল ‘অতিমানব’ বানানোর একধরনের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে।

এ যেন এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা—মানুষকে ধীরে ধীরে ভুলিয়ে দেওয়া, যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তারা গত বছর রাজপথে নেমেছিল।

এখন দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের পতনের পরও ফ্যাসিবাদের শিকড় পুরোপুরি কাটা যায়নি। বরং প্রথম আলোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ব্যবহার করে আবারও ধীরে ধীরে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।

এবারের ১৫ আগস্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে “শোক ঝড়” দেখা গেল, তা নিছকই আবেগ নয়—বরং একটি প্ল্যানড প্রোপাগান্ডা।
প্রশ্ন হলো—মানুষ কি এই সাংস্কৃতিক প্রলোভনে ভুলে যাবে রক্ষীবাহিনীর গুলিবর্ষণ, দুর্ভিক্ষে অনাহারে মৃত্যুবরণ, কিংবা গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস?

১৫ আগস্টের এই “শ্রদ্ধার পোস্টগুলো” আসলে আমাদের সামনে নতুন করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে—
এটা কি সত্যিই তারকাদের ব্যক্তিগত আবেগ?
নাকি প্রথম আলো পরিচালিত সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্কের পরিকল্পিত প্রচারণা?
আর এর চূড়ান্ত লক্ষ্য কি ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন?

যে যাই বলুক, একটি জিনিস পরিষ্কার—ফ্যাসিবাদ পতনের পরেও ফ্যাসিবাদ বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। আর সেই লড়াই এখন রাজপথে নয়, ফেসবুকের পোস্টে।

No comments found