সত্যজিৎ দাস:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মেকানিছড়া চা বাগানের প্রান্তে,গাছগাছালি আর পাখির কূজনে ঘেরা একটি ছোট্ট কুড়েঘরে থাকেন রাম সিং গড়।এক শতকেরও বেশি সময় ধরে যিনি সময়কে হার মানিয়ে বেঁচে আছেন নিঃশব্দে।
বুধবার,৬ আগস্ট ছিল তাঁর জন্মদিন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, জন্ম ১৯০৫ সালের এই দিনে মানে বয়স ১২০ বছর। তবে রাম সিং নিজেই বলেন,“আইডি কার্ডে বয়স কম লেখা,আমার আসল বয়স ১৩৬ বছর ”
দীর্ঘ এই জীবনযাত্রার সম্মানে বিকেলে তার নিজ ঘরে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং চা শ্রমিকরা। রাম সিংয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় শুভেচ্ছা উপহারও।
এক সময় চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এখন অবসরে থাকলেও বয়সের ভারে খুব একটা ন্যুব্জ নন। চোখে চশমা ছাড়াই দিব্যি পড়তে পারেন বাংলা ও ইংরেজি,লিখতেও পারেন সাবলীলভাবে। শারীরিক কোনো বড় জটিলতা নেই বললেই চলে।
ইউএনও ইসলাম উদ্দিন বলেন,“এই বয়সেও তার মাঝে এমন সজীবতা সত্যিই অবাক করার মতো। তিনি যেন জীবন্ত ইতিহাস।”
রাম সিংয়ের বসতভিটা ভারতের সীমান্তঘেঁষা নো-ম্যানস ল্যান্ডে হরিণছড়া চা বাগানের মেকানিছড়া এলাকায়। জায়গাটি অনেকটা ছিটমহলের মতোই বিচ্ছিন্ন। তবে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এখন সেখানকার ২৮টি পরিবার সোলার বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি সেবাও পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার।
শ্রীমঙ্গলের স্থানীয়দের মতে,রাম সিং গড় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ। তার জীবনের প্রতিটি দিন যেন একেকটি ইতিহাসের পৃষ্ঠা। ১৩৬ বছর বয়সেও তিনি অতিথিদের নিজ হাতে চা বানিয়ে আপ্যায়ন করেন এক অদ্ভুত সুন্দর বাস্তবতা।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমে জানানো হয়;“জনাব রাম সিং গড়,পিতা- বুগুরাম গড়,বসবাস করেন শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী হরিণছড়া চা বাগানের ম্যাকনিছড়া এলাকায়। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম ৬ আগস্ট, ১৯০৫। আমরা কাজের ফাঁকে উনাকে দেখে আসলাম। এখনও খালি চোখে বাংলা-ইংরেজি দুইটাই পড়তে পারেন ”
এই মানুষটির জীবন কেবল একটি জন্মদিন নয়। এ এক উদযাপনযোগ্য ইতিহাস,প্রতিদিন।