রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত 'জুলাই সনদ' চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং সাংবিধানিক মর্যাদা নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপিসহ বিভিন্ন দল জাতীয় ঐক্য কমিশনের কাছে তাদের লিখিত মতামত জমা দিয়েছে, যেখানে বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে।
সনদটি কীভাবে এবং কখন আইনগত ভিত্তি পাবে তা নিয়েই মূলত বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সনদটিকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার পক্ষে, প্রয়োজনে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবও করেছে তারা। অন্যদিকে, বিএনপি মনে করে, যেকোনো অধ্যাদেশ পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে, তাই নির্বাচিত সংসদ দ্বারাই এর বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। এই মতবিরোধ নিরসনে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনার জন্য পাঠানোর প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে।
সবচেয়ে বড় মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে সনদের একটি প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে, যেখানে এটিকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া এবং আদালতের এখতিয়ারের বাইরে রাখার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, এটি নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করবে এবং একটি স্বৈরাচারী ব্যবস্থার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। জামায়াতে ইসলামী গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সনদটিকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে রাখার পক্ষে মত দিলেও আদালতের এখতিয়ারের বিষয়টি নিয়ে নীরব রয়েছে।
জাতীয় ঐক্য কমিশন জানিয়েছে, বিগত ছয় মাসে ৩০টিরও বেশি দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার ভিত্তিতেই সনদটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে রাজনৈতিক চাপের কারণে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মতো প্রভাবশালী দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সনদকে ঘিরে দলগুলোর অবস্থান দেশের ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।