ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অব্যাহতিপ্রাপ্ত তিন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবে অবৈধ উপায়ে অর্থ আয়ের চাঞ্চল্যকর প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার অপব্যবহার, বদলি-বাণিজ্য ও কেনাকাটায় কমিশনের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক সত্যতা মেলার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক তিনজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তথ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর চলতি বছরের ৪ মে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি। এর আগে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করা হয়। সেখানেই মূলত তাদের আয়ের উৎসের সঙ্গে সংগতিহীন বিপুল পরিমাণ অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন এবং উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই কর্মকর্তারা প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বদলি ও পদোন্নতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতেন। এছাড়াও, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কেনাকাটায় কমিশন নেওয়া এবং নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য মেলার পর তিন অভিযুক্তকেই দুদক তলব করে এবং তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে। তবে, দুদকের মানিলন্ডারিং শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা লেনদেন সংক্রান্ত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি এবং তাদের দেওয়া বক্তব্যে দুদক সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এই প্রাথমিক অসন্তুষ্টি প্রমাণ করে যে অভিযোগের পেছনে শক্ত ভিত্তি রয়েছে।
গণমাধ্যম ও নানা মহল থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। এর আগে, যুব অধিকার পরিষদ ‘মার্চ টু দুদক’ কর্মসূচি নিয়ে দুদকের সামনে অবস্থান নেয় এবং একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। পাশাপাশি, হাইকোর্টের দুই আইনজীবীও একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে দুদকে নালিশ করেন।
জনগণের চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ২২ এপ্রিল উপদেষ্টা আসিফের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই কারণে এর আগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও তুহিন ফারাবিকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই অব্যাহতিই প্রমাণ করে, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবগত ছিল।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন তদন্তের বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও জানান, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তার কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তবে, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।



















