close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সংবিধান সংস্কারে বিভ্রান্তি নয়, ভারসাম্য চায় বিএনপি: নোট অব ডিসেন্টের আলোচ্য বিষয়সমূহ..

Riyaz  avatar   
Riyaz
নোট অব ডিসেন্টের মাধ্যমে বিএনপি দেখিয়েছে যে তারা সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে নয়, বরং বিভিন্ন সাংবিধানিক বিষয়ে ভারসাম্য, রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নিয়োগ কাঠামোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিকল্প মত উপস্..

বিএপির নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো একটু তুলে ধরা দরকার,সবাই ভাবে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে পুরো সংস্কারকে একাই বাঁধাগ্রস্থ করে দিয়েছে।
বিদ্র: আমি নোট অব ডিসেন্টের যেই বিষয়গুলো উল্লেখ করবো সেগুলোতে যে শুধুমাত্র বিএনপি একা নোট ডিসেন্ট দিয়েছে ব্যাপার টি এরকম নয় বিএনপি সহ আরো অনেক দলের নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে নোট অব ডিসেন্ট আছে।বিএনপি ছাড়াও সংস্কার কমিশনের মিটিং এ যারা উপস্থিত ছিলেন সকলেরই কম বেশি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে জুলাই সনদে।

১.জুলাই সনদে বিদ্যমান সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করে সাম্য, মানমবিক মর্যাদ, সামাজিক ন্যায়বিচার
এবং ধমীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতী সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহন করা হবে সেক্ষেত্রে বিদ্যমান সংবিধানের মূলনীতির ভিতরের একটি মূলনীতি ছিল "সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ন আস্থা এবং বিশ্বাস"সেটিও বাতিল হয়ে যায় বিএনপি এখানে তার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে যদি তারা ক্ষমতায় আসে তাহলে অন্য নতুন মূলনীতিগুলোর সাথে "সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ন আস্থা এবং বিশ্বাস" কে মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে বহাল রাখবে।

২.জুলাই সনদে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে অর্থ বিল এবং আস্থা প্রস্তাবের ভোট ব্যাতীত সংসদ সদস্যরা বাকি সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে।বিএনপি এটা মেনে নিয়ে এটার সাথে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে আরো দুটি বিষয় যুক্ত করেছে যে তারা যদি ক্ষমতায় আসতে পারে সেক্ষেত্রে ৭০ অনুচ্ছেদের এই দুটি বিষয়ের সাথে তারা আরো দুটি বিষয় যুক্ত করবেন তা হলো সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দলের বাহিরে ভোট দিতে পারবে না।

৩.ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য ৭ সদস্যর বোর্ডে ২ জন থাকবে সরকারি দল থেকে বিরোধী দল থেকে থাকবে ৩ জন এবং নিরেপক্ষ থাকবে ২ জন যাদেরকে সংসদের বাহির থেকে নেওয়া হবে।বিএনপি এইখানে ৭ জনের কমিটির সাথে একমত হয়ে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছে যে যদি তারা ক্ষমতায় আসে তাহলে সরকারি দল এবং বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যায় ভারসাম্য আনবে।

৪.দূর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ বোর্ডের ৭ জন সদস্যর ক্ষেত্রে মাত্র ১ জন আসবে সরকারি দল থেকে ৩ জন আসবে বিরোধী দল থেকে আর বাকি ৩ জন আসবে সংসদের বাইরে থেকে।বিএনপি এখানেও ৭ সদস্যর কমিটির ব্যাপারে একমত হয়ে নোট অব ডিসেন্টে দিয়ে বলেছে তারা যদি ক্ষমতায় আসতে পারে সেক্ষেত্রে সরকারি দল,বিরোধী দল এবং নিরেপক্ষ সদস্যদের ক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যার ভারসম্য আনবে।

৫.মহা-হিসাব পরীক্ষক নিয়োগ বোর্ডের ৭ জন সদস্যর ২ জন সরকারি দল থেকে এবং ৫ জন বিরোধী দল থেকে, বিএনপি এখানে ৭ সদস্যর কমিটির ক্ষেত্রে একমত হয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছেন যদি তারা ক্ষমতায় আসতে পারে সেক্ষেত্রে তারা সরকারি দলের সদস্য এবং বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যার ভারসাম্য আনবে।

৬.সরকারির কর্ম-কমিশনের নিয়োগ বোর্ডের ৭ জন সদস্যর ক্ষেত্রে ২ জন সরকারি দল থেকে ৫ জন বিরোধী দল থেকে নেওয়া হবে।বিএনপি এখানে ৭ জন সদস্যর ক্ষেত্রে একমত হয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসতে পারে সেক্ষেত্রে তারা সরকারি দল এবং বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যায় ভারসাম্য আনবে।

৭.প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিনিয়র বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিবেন বিএনপি এখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছেন সর্বোচ্চ সিনিয়র দুইজন বিচারপতি থেকে রাষ্ট্রপতি তার বিবেচনা অনুযায়ী একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিবেন।রাষ্ট্রপতিকে অপশন দেওয়া উচিত সর্বোচ্চ যোগ্যতা বিবেচনা করার জন্য।

৮.প্রজান্ত্রের কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনটি পৃথক কর্মকমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।সরকারি কর্মকমিশন শিক্ষা, সরকারি কর্মকমিশন স্বাস্থ্য এবং সরকারি কর্মকমিশন সাধারন।বিএনপি এখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছে তারা কর্মকমিশনের বিভক্তি চান না,এই ধরনের বিভক্তির আদো কোনো যৌক্তিকতা নেই।

৯.সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিশনের বিধান সংবিধানে অন্তভূক্ত করা হবে বিএনপি এখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছন আইন প্রনয়নের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই।শুধু বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেই নয় রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক পদে নিয়োগের নীতিমালা বা আইন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার যৌক্তিকতা নেই।সংবিধানে শুধুমাত্র মৌলিক বিষয়গুলোকেই অন্তর্ভূক্ত করা হবে যেগুলোর উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র তার আচরন এবং কর্মপন্থা প্রনয়ন করবে।কিছু কিছু দল চাচ্ছে সাংবিধানিক পদগুলোর নিয়োগের নীতিমালা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে আর বিএনপি সহ কিছু দল চাচ্ছে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত না করে আইন প্রনয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে।বিএনপির যুক্তি হচ্ছে সময়ের প্রয়োজনে নীতিমালা বা আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে এইসব নিয়োগের নীতিমালা যদি সংবিধান অন্তর্ভুক্ত করা কয় এই নীতিমালা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বার বার সংবিধান সংশোধন করতে হবে আর সংবিধান সংশোধন জটিল কাজ। আর যদি এগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত না থাকে সেক্ষেত্রে যেকোনো সময় রাষ্ট্রের প্রয়োজনে নিয়োগের নীতিমালা অতি সহজেই পরিবর্তন যাবে,তবে নির্বাচন কমিশন যেহেতু রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান এর উপরেই রাষ্ট্রের সঠিক গনতন্ত্র নির্ভর করে সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে যাতে কেউ চাইলেই হাসিনার মতো নির্বাচনকে প্রহসনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে না পারে।

১০.একই ব্যাক্তি সরকার প্রধান এবং দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবে না এইখানে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছেন পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের সংবিধানে এই ধরনের আইন সন্নিবেশিত নেই এতে করে ব্যাক্তির এবং রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়।তারা কাকে দলের প্রধান এবং সরকার প্রধান হিসেবে নিয়োজিত করবেন সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার।সরকার প্রধান এবং দলীয় প্রধান আলাদা হলে রাষ্ট্রীয় অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয় যেটা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়।ভারতে শেষ বার যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে তখন তাদের দলীয় প্রধান এবং সরকার প্রধান আলাদা ছিল তখন তাদের অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে।সরকার থেকে যে কাজেই করা হোক না কেন আল্টিমেটলি সেটা খারাপ হলে দলের উপড় গিয়েই তার দায় বর্তায় এবং দলের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করেই জনগন দলকে ভোট দিয়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেয়।বিএনপি এখানে সর্বশেষ বলেছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একই ব্যাক্তি সরকার প্রধান,দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা মনোনীত হন সেক্ষেত্রে অন্তত দুইটি পদে এক ব্যাক্তির পদে থাকার বিষয়টি তারা সমর্থন করে।

উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কমিশন পিআর পদ্ধতির সুপারিশ করেছেন, তারা চায় নিম্নকক্ষের দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন ভাগাভাগি হবে তাদের প্রস্তাবের বিপরীতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বিএনপি বলেছে নিম্নকক্ষের আসনের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষে আসন ভাগাভাগি হবে এর মানে নিম্নকক্ষে যে দলের যত পারসেন্ট  আসন উচ্চকক্ষে সেই দল তত পারসেন্ট আসন পাবে ১০০ টি সিটের মধ্যে থেকে।আমি ব্যাক্তগত ভাবে উচ্চকক্ষের নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতিকে সমর্থন করি এতে করে উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের মধ্যে একটি চেক এন্ড ব্যালেন্স তৈরি হবে।উচ্চকক্ষে পিয়ার না হলে উচ্চকক্ষ গঠনের কোনো যথার্থতা নেই।যদিও বিএনপি মুল দলিলে সই করে ফেলেছে আমি আশা করি বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআর এর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে।কিছু কিছু দর আছে যারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছে তারা আপাতত উচ্চকক্ষ চায় না তাদের মতে বাংলাদেশে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা নেই।

কিছুদিন আগে ডা. তাসনিম জারা একটি কথা খুব ভাইরাল হয়েছিল যে সরকার কে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে দূর্নীতি দমন কমিশন। যদি দূর্নীতি দমন কমিশন সরকারের দ্বারা  নিয়োগপ্রাপ্ত হয় তাহলে সেই দূর্নীতি দমন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ কাজ করবে।তিনি জুলাই সনদে প্রস্তাবিত দূর্নীতি দমন কমিশন গঠনের জন্য সুপারিশটি সম্পর্কে হয় যানেন না আর না হয় জেনেশুনে মিথ্যাচার করেছেন।দূর্নীতি দমন কমিশন নিয়োগ হবে ৭ সদস্য কমিটির মাধ্যমে সেই কমিটির সদস্যরা যথাক্রমে সরকারি দল,বিরোধী দল এবং সংসদের বাইরে থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।প্রথমে এই কমিটি বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের কাছ থেকে তাদের মনোনীত লোকদের কে একিভূত করবেন সেখান থেক এই ৭ সদস্যর কমিটি একজন বা দুইজনকে তাদের বিবেচনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবেন রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে যদি দুইজন হয় সেক্ষেত্রে দুইজন থেকে একজনকে আর একজন হলে তো রাষ্ট্রপতিকে একজনকেই নিয়োগ দিতে হবে।এইখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই সুতরাং দূর্নীতি দমন কমিশন সরকার কোথায় নিয়োগ করলো সেটা আপনারাই বিবেচনা করুন।বিএনপি বলেছেন ৭ সদস্যর কমিটি দুইজনকে সুপারিশ করলে ভালো হয় এতে করে রাষ্ট্রপতির হাতে অপশন থাকবে সঠিক ব্যাক্তিকে পদের জন্য বিবেচনা করার।
শুধু যে দূর্নীতি দমন কমিশন এভাবে গঠিত হবে ব্যাপারটি সেরকম নয় রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক পদের নিয়োগ এই প্রক্রিয়াতেই হবে,দুই-একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া।

没有找到评论


News Card Generator