সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাসের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা দেশের সামরিক-বেসামরিক ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর বড় প্রশ্ন তুলেছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সদ্য গৃহীত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী আইন দেশটির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে এক গভীর পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এই সংশোধনী অনুযায়ী, বর্তমান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে শুধু ক্ষমতা বৃদ্ধিই নয়, বরং আজীবনের জন্য গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরের পর এটি আইনে পরিণত হওয়ায় সমালোচকরা বলছেন, এটি পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশটিকে ধীরে ধীরে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই সংশোধনী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাকে আরও সুসংহত করেছে। যারা এর পক্ষে আছেন, তারা বলছেন এটি সশস্ত্র বাহিনীর প্রশাসনিক কাঠামোকে আধুনিক করবে এবং আদালতগুলোর ওপর মামলার চাপ কমাবে। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবেই দেশটির রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ একটি বড় বিতর্কিত বিষয়। সামরিক অভ্যুত্থান এবং পর্দার আড়াল থেকে প্রভাব খাটানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের।
বিশ্লেষকদের মতে, জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বা জিয়া-উল-হকের মতো সামরিক নেতাদের প্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাকিস্তান বারবার অস্থিতিশীলতার শিকার হয়েছে। বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে এই সূক্ষ্ম ক্ষমতা ভারসাম্যকে এতদিন 'হাইব্রিড শাসন' বলা হতো। তবে ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সর্বশেষ সংশোধনীটি সবচেয়ে জোরালো ইঙ্গিত যে, পাকিস্তান এখন আর হাইব্রিড নয়, বরং এক 'পোস্ট-হাইব্রিড' সিস্টেমে প্রবেশ করেছে। তার মতে, বর্তমানে বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে।
এই সংশোধনীর সুবাদে সেনাপ্রধান মুনির এখন থেকে নৌ ও বিমান বাহিনীরও তত্ত্বাবধান করবেন। তার ফিল্ড মার্শাল পদবি আজীবনের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অবসর গ্রহণের পরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ 'দায়িত্ব এবং কাজ' পেতে পারেন। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আজীবন জনপরিসরে প্রভাবশালী ভূমিকায় থাকবেন। যদিও বিলটির সমর্থকরা দাবি করেছেন, এটি সামরিক কমান্ড কাঠামোকে আরও স্পষ্ট করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের মতে, এটি আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বৃহত্তর সংস্কারের অংশ।
তবে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মুনিজা জাহাঙ্গীর এই পদক্ষেপকে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হিসেবে দেখছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সামরিক ও বেসামরিক কাঠামোর মধ্যে কোনো ভারসাম্য আর অবশিষ্ট নেই এবং এমন এক সময়ে সামরিক বাহিনীকে আরও ক্ষমতায়িত করা হলো যখন তাদের লাগাম টানার প্রয়োজন ছিল। এই আইন প্রমাণ করছে যে, ক্ষমতার পাল্লা একেবারেই সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।



















