রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা জোরদারে মোতায়েন করা হয়েছে ১২ প্লাটুন বিজিবি। পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও নিরাপদ রাখতে নেওয়া হয়েছে এই বিশেষ ব্যবস্থা।
রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে হঠাৎ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সম্ভাব্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ১২ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম।
তিনি জানান, চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবিকে মোতায়েন করা হয়েছে যাতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা অনুভূতি আরও দৃঢ় হয়। রাজধানী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকা ঘিরে উত্তেজনা, রাজনৈতিক কর্মসূচি, গণসমাবেশ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাঠ পর্যায়েও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোনো ধরনের গুজব বা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড যাতে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে, সে বিষয়েও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা ও আশপাশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেখা গেছে বিজিবির টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষ এমন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও অনেকেই একে নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ব্যবসায়ী শ্রেণি, অফিসগামী মানুষ এবং দৈনন্দিন কর্মজীবীরা মনে করছেন, পরিস্থিতি নিরাপদ থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন থাকবে।
এটা প্রথমবার নয় যে রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করা হলো। অতীতেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, বিশেষ করে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, বিজিবি মাঠে নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এবার ঠিক কোন পরিস্থিতি বা আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে এমন মোতায়েন—সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আগাম প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এই মোতায়েন।
জনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ অন্যান্য বাহিনীও সমন্বিতভাবে মাঠে কাজ করছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, স্থাপন করা হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট এবং বিশেষ টহল।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় জনমনে যে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে—পরিস্থিতি কি আরও জটিল হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে মাত্র।”
এদিকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি যেকোনো সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তারা বলছেন, বড় শহরগুলোতে এমন হঠাৎ উত্তেজনা সৃষ্টি হলে প্রাথমিকভাবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা স্বাভাবিক ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত একটি কৌশল।
এখন নজর পুরোপুরি মাঠের পরিস্থিতির দিকে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোর নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।



















