আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি'র সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নিজের নাম না দেখে চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ আজাদ হোসেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম, জেল-জুলুম ও ত্যাগের পরও মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তিনি এই পরিস্থিতিকে একটি 'অদৃশ্য শক্তির ষড়যন্ত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জরুরি ভিত্তিতে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আজাদ হোসেনের দাবি, তিনি দলের প্রতি পূর্ণাঙ্গ নিবেদিত ছিলেন। তিনি জানান, গত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ২৬ বার কারাবরণ করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের হয়েছে। এই দুঃসময়ে তিনি ও তাঁর পরিবারকে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে; একটানা ১৬ বছর তিনি বাড়িতে ঈদ করতে পারেননি। এমনকি তাঁর মায়ের জানাজার সময়ও পরিবারের সদস্যরা রাজনৈতিক কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
তাঁর সুস্পষ্ট অভিযোগ, 'যাদের নাম তালিকায় এসেছে, তারা গত ১৬ বছর মাঠেই ছিলেন না।' তিনি মনে করেন, তাঁর মতো ত্যাগী নেতার নাম একটি শক্তিশালী মহলের চক্রান্তে রাজশাহী বিভাগ এবং সিরাজগঞ্জ জেলার তালিকা থেকে কৌশলে হাইড করা হয়েছে, যাতে তাঁর জীবন বৃত্তান্ত তারেক রহমান পর্যন্ত না পৌঁছায়।
আজাদ হোসেন মনোনয়ন তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বিশেষত এক প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে বলেন, ওই প্রার্থীর বয়স এখন ৯০ বছরের বেশি এবং তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জামানত হারিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যিনি ১৭ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় এবং শারীরিকভাবে দুর্বল, তিনি কিভাবে উল্লাপাড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে দলের প্রতীক 'ধানের শীষ' নিয়ে জয় নিশ্চিত করবেন।
তাঁর মতে, এই ধরনের মনোনয়ন দলের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে এবং আসনটি জামায়াতসহ অন্যান্য প্রতিপক্ষের হাতে চলে যেতে পারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দলের যারা প্রকৃত ত্যাগী ও যোদ্ধা, তাদের মূল্যায়ন না হলে দল কঠিন সংকটে পড়বে।
দলের তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীরাও এই মনোনয়ন সিদ্ধান্তে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। মোহাম্মদ আজাদ হোসেন জানান, এই মনোনয়নের প্রতিবাদে তাঁর নেতাকর্মীরা মশাল মিছিলসহ বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকসহ সবাই তাঁকে একক প্রার্থী হিসেবে চেয়ে রেজুলেশন দিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, মোহাম্মদ আজাদ হোসেন ছাড়া এই আসন পুনরুদ্ধার করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কেবল তাদের মতো ত্যাগী ও লড়াকু নেতাদের মাধ্যমেই দল সংগঠিত ও শক্তিশালী হতে পারবে এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিশন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
মোহাম্মদ আজাদ হোসেন তাঁর প্রিয় নেতা তারেক রহমানের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আপনি সত্যিকারের যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী ঠিক করুন। যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, আমি তাঁর জন্যই কাজ করব।' তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে বাদ দিয়ে দলের ক্ষতি করা হচ্ছে। তিনি বিশ্বাস করেন, তারেক রহমান এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন এবং উল্লাপাড়ার আসনটি যাতে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করা যায়, সেজন্য একটি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।



















