close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান: হাসনাত-সারজিসের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল। দীর্ঘদিন ধরে দুই সংগঠনের তৎপরতা, বিশেষ করে জুলাই মাসের..

সূত্রমতে, দলের আহ্বায়ক হিসাবে নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসাবে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। তবে দলের মূল শক্তি হয়ে থাকবেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তাদের একজনকে দলের মুখপাত্র এবং অন্যজনকে মুখ্য সংগঠকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এই দুই নেতা দলের ভেতরে ও বাইরে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবেন।

এছাড়া, আলী আহসান জোনায়েদকে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারীকে যুগ্ম সদস্য সচিব করা হচ্ছে। আলী আহসান জোনায়েদ একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। ফলে তাকে পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে ছাত্রশিবির সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা ও আরিফুল ইসলাম আদীব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদকেও দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে।

নেতৃত্ব বণ্টনে চ্যালেঞ্জ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সামনে থেকে ভূমিকা রাখা অনেক ছাত্রনেতা নতুন দলে জায়গা পেতে মরিয়া হয়ে আছেন। কিন্তু প্রত্যাশিত তুলনায় দলের নেতৃত্বের জায়গা সীমিত হওয়ায় সমন্বয়করা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে, ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব এবং পুরনো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের মধ্যে ভারসাম্য রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নতুন রাজনৈতিক দলটি মূলত ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হলেও, অভিজ্ঞ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এতে যুক্ত হতে চাইছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে একদল সাবেক সামরিক কর্মকর্তার বৈঠক হয়েছে, যেখানে তারা নতুন দলকে সমর্থন জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তির আবির্ভাব সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির এ উদ্যোগকে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো কীভাবে দেখবে, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সরকারের অবস্থান থেকে বলা যায়, তারা নিশ্চয়ই এই রাজনৈতিক শক্তির উত্থানে শঙ্কিত থাকবে, বিশেষ করে যদি এটি আগামী নির্বাচনে বড় কোনো শক্তি হয়ে ওঠে। ছাত্র নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা এ দল যদি দেশের সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়, তাহলে এটি ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলোর প্রতিক্রিয়াও লক্ষণীয় হবে। বিএনপি বা অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি যদি এই দলকে নিজেদের সহযোগী বা সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে দেখে, তাহলে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। আবার, যদি তারা মনে করে এই দল তাদের ভোটব্যাংককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তবে তারা এটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে দেখবে।

ভবিষ্যৎ কৌশল ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

নতুন দলটি আত্মপ্রকাশের দিনেই পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতের পরিকল্পনা করেছে, যা নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তির ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু শুধু বড় জমায়েত করাই যথেষ্ট নয়, তাদের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলও নির্ধারণ করতে হবে।

  • নীতিগত স্পষ্টতা: দলটি কী আদর্শ ধারণ করে এবং কীভাবে তারা বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চায়, তা জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তারা আন্তর্জাতিক মহলে কী বার্তা দিচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
  • সংগঠনের বিস্তার: ঢাকা-কেন্দ্রিক না থেকে সারাদেশে তাদের সংগঠন বিস্তার করতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হতে যাচ্ছে। এটি শুধু ছাত্রনেতাদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই নয়, বরং বড় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে যদি তারা সঠিক কৌশল নেয় এবং সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। তবে তাদের সামনে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা পার করা সহজ হবে না।

আব্দুল্লাহ আল মামুন, লেখক ও সাংবাদিক

Walang nakitang komento


News Card Generator