কক্সবাজারের অরক্ষিত সীমান্ত রুটগুলো ব্যবহার করে চট্টগ্রামে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটছে, যা আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অপরাধ বৃদ্ধির শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযান সত্ত্বেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারসহ একাধিক সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ছোট আকারের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র প্রবেশ করছে মহানগরীতে। এর পাশাপাশি দেশীয়ভাবে তৈরি সহজলভ্য অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। তবে, উদ্বেগের বড় কারণ হলো, বিগত সময়ে থানা থেকে লুট হয়ে যাওয়া প্রায় দেড় শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বিশেষ করে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে অস্ত্র উদ্ধারে একাধিকবার বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। এসব অভিযানে কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হলেও, অপরাধমূলক কার্যক্রমে অস্ত্রের ব্যবহার কমেনি, বরং বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অস্ত্রের যোগান নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, থানা থেকে লুট হওয়া মোট ১৫৫টি অস্ত্র এখনো নিখোঁজ। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, এই অস্ত্রগুলোর একটি বড় অংশই বর্তমানে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের হাতে চলে গেছে।
বিভিন্ন সূত্র এবং গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের একাধিক অরক্ষিত রুট এই অস্ত্র পাচারের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ঘুমধুম বাইশফাড়ি, বালুখালী, উখিয়ার পালংখালী, হোয়াইক্যং নলবনিয়া এবং নাইক্ষ্যছড়ির বেশ কিছু গোপন পথ দিয়ে নিয়মিতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। জানা যায়, আরাকানের দিক থেকে আসা এই অস্ত্রগুলো মূলত খাদ্যপণ্য ও অর্থের বিনিময়ে হাতবদল হচ্ছে। একইসঙ্গে, পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও এই অস্ত্র বেচাকেনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে।
সন্ত্রাসীরা তাদের অপরাধে সবচেয়ে বেশি পিস্তল, রিভলবার-এর মতো বহনযোগ্য ছোট অস্ত্র ব্যবহার করছে। এমনকি চাইনিজ রাইফেল-এর মতো অপেক্ষাকৃত ভারী অস্ত্রও তাদের হাতে পাওয়া যাচ্ছে। কেবল বিদেশি অস্ত্র নয়, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য। বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া, কক্সবাজার এবং মহেশখালীর পাহাড় ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা ছোট ছোট কারখানায় এসব দেশীয় অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, দেশীয় অস্ত্র তৈরির জন্য বড় সামরিক কারখানার প্রয়োজন হয় না, বরং ছোট কারখানাতেই তারা এগুলো তৈরি করে ফেলে এবং বেশ কিছু অস্ত্র তৈরির কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে।



















