বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ করে মানবিক, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে নয় দফা দাবি ঘোষণা করেছে নাগরিক ছাত্র ঐক্য। সংগঠনটি জানায়, দীর্ঘ দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর রাষ্ট্র পুনর্গঠনের এ সময়ে ছাত্রসমাজ আবারও ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রভাগে দাঁড়াতে পারে।
২২ জুন ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক ছাত্র ঐক্য এক বিবৃতিতে বলেছে, “ক্ষমতার দাস নয়—মানুষের পক্ষে, নীতি ও মূল্যবোধভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি” গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য। জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন বাংলাদেশের যে আশা তৈরি হয়েছে, তা টিকিয়ে রাখতে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত ভূমিকা নিতে হবে বলে তারা উল্লেখ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়— “এই পথচলায় তোমার অংশগ্রহণই আমাদের শক্তি, তোমার বিশ্বাসই আমাদের প্রেরণা।”
নাগরিক ছাত্র ঐক্যের ঘোষিত ৯ দফা:
শিক্ষা: মানবিক উন্নয়নের ভিত্তি— বিনামূল্যে ও মানসম্পন্ন শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত, সরকারি শিক্ষাবাজেট বৃদ্ধি, প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষা সম্প্রসারণ, গবেষণা অনুদান ও বৃত্তি সর্বজনীনকরণ এবং সব ক্যাম্পাসে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের অধিকার— কৃষকের ন্যায্য মূল্য, উৎপাদন উপকরণে ভর্তুকি, কৃষক ঋণমুক্তি, জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি ও খাদ্য বিতরণব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি উঠে।
স্বাস্থ্য: সর্বজনীন সুরক্ষা— দারিদ্রসীমার নিচে সব নাগরিকের চিকিৎসা ব্যয় রাষ্ট্র বহনের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য কার্ড চালু, জেলা–উপজেলায় আধুনিক হাসপাতাল, ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ, মানসিক ও মাতৃস্বাস্থ্যসেবা জোরদার এবং দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
কর্মসংস্থান ও বাসস্থান— যুবকদের সম্মানজনক কর্মসংস্থান, রাষ্ট্রীয় উদ্যোক্তা তহবিল, নারীদের সমান মজুরি, গ্রামীণ অর্থনীতি ও হস্তশিল্পে প্রণোদনা, প্রবাসী শ্রমিক প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্স আয়ে করমুক্ত সুবিধা এবং নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় আবাসন প্রকল্প চালুর দাবি জানানো হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকার— প্রবীণ, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সর্বজনীন সুরক্ষা, গৃহহীনদের আবাসন, বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণ বন্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘনে শূন্য সহনশীলতা এবং ভোটাধিকার–মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
অর্থনীতি, সম্পদ ও টেকসই উন্নয়ন— ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি, দরিদ্রদের কর রেয়াত, রাষ্ট্রীয় সম্পদ জনগণের মালিকানায় রাখা, দুর্নীতি ও কালো অর্থনীতি নির্মূল, নদী–বন–কৃষিজমি দখলমুক্ত রাখা এবং জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।
বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও ডিজিটাল অধিকার— বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিল্পের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ, ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার ঘোষণা, অনলাইন গোপনীয়তা রক্ষা এবং যুবকদের প্রযুক্তি–উদ্ভাবনে তহবিল গঠনের প্রস্তাব আসে।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও মানবিক পররাষ্ট্রনীতি— জেলা–উপজেলা পর্যায়ে ক্ষমতা ও বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা, জনগণভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাধীন ও মানবিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রযন্ত্র ও জাতীয় ঐক্য— দুদক ও অডিটকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তকরণ, পুলিশকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা, সরকারি নিয়োগ ও বদলিতে স্বচ্ছতা, করব্যয়ের জনপর্যবেক্ষণ এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সংলাপভিত্তিক জাতীয় ঐক্য গঠনের দাবি জানানো হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, “বাংলাদেশও বদলে দেওয়া সম্ভব।” তারা মনে করে, চিন্তাশীল ও মানবিক ছাত্রসমাজই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় শক্তি।



















