আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। খুলনার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা এলাকা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে প্রথমবারের মতো একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। এই আসনে জামায়াতের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী। তবে এই মনোনয়নের পরই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক, কারণ কৃষ্ণ নন্দী আওয়ামী লীগের সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের 'অতি ঘনিষ্ঠ' হিসেবে পরিচিত।
পেশায় ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দী পারিবারিক সূত্রে মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের অনুসারী ছিলেন। তবে তাঁর দাবি, ২০০৩ সালে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ারের হাত ধরে তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হন। অন্যদিকে, স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে—জনপ্রিয় স্থানীয় জামায়াত নেতা শেখ আবু ইউসুফকে বাদ দিয়ে কী করে বিতর্কিত এই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলো?
স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কৃষ্ণ নন্দী প্রকাশ্যে সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন কর্মসূচির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে, যা তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে 'আওয়ামী লীগের দোসর' আখ্যা দিয়ে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগও করেছিল বলে স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। অনেকে মনে করেন, মূলত নিজেকে রক্ষা করতেই তিনি এখন জামায়াতের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন।
তবে, বিতর্কের গভীরতা এখানেই শেষ নয়। বিশ্বস্ত সূত্র মারফত এমন তথ্যও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে, বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কৃষ্ণ নন্দীর অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। সম্প্রতি এই দুই ব্যক্তির একটি বৈঠককারী ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, 'ব্যবসায়ী হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু ঘনিষ্ঠতার কথা অতিরঞ্জিত। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে ফুল দেওয়ার মতো সাধারণ ছবি নিয়ে এখন কাদা–ছোড়াছুড়ি করা হচ্ছে।' তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি দীর্ঘদিনের জামায়াতকর্মী এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি আস্থাশীল বলেই এ দলের প্রতি যুক্ত।



















