close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইস রা য়ে লি ও ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছিলেন যে বাঙালি পাইলট..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
একজন বাঙালির বীরত্বে কেঁপেছিল আকাশ! ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম ছিলেন এমন একজন পাইলট, যিনি পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও বাংলাদেশ—চার দেশের বিমান বাহিনীতে লড়েছেন, আর শত্রুপক্ষের চারটি যুদ্ধবিমান গুলি ক..

সময়টা ছিল ১৯৬৭ সালের ৫ জুন। মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ—ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। ওই দিনই ইসরায়েলি বিমান বাহিনী জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটি আক্রমণ করে। কিন্তু সেই দিন ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হয়েছিল। এক বাঙালি পাইলট, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম, পাল্টা আক্রমণে গুলি করে ভূপাতিত করেন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। শুধু তাই নয়, এর দুদিন পর তিনি ইরাকের পক্ষে আরও দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন।

এই সাইফুল আজম কোনো সাধারণ পাইলট নন—তিনি চার দেশের বিমান বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করা একমাত্র বাঙালি যোদ্ধা, যিনি ভারত এবং ইসরায়েলের চারটি বিমান ভূপাতিত করেছেন।

১৯৬০ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত সাইফুল আজম প্রথমবার আলোচনায় আসেন ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়। সেসময় তিনি ভারতীয় একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেন এবং পাকিস্তান সরকার তাকে 'সিতারা-ই-জুরাত' পদকে ভূষিত করে।

এরপর ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে জর্ডানে যান এবং সেখানে বিমান বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। পরের বছর, ছয় দিনের যুদ্ধে তিনটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামান।

জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটি যখন ইসরায়েলি হামলার মুখে পড়ে, তখন সাইফুল আজম হান্টার জেট চালিয়ে প্রতিরোধে নামেন। কায়সার তুফায়েল তার বইয়ে লিখেছেন, “সাইফুল সাহসিকতার সঙ্গে একটির পর একটি ইসরায়েলি বিমানকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। প্রতিটি গুলি নিখুঁতভাবে আঘাত হানে। এক পাইলট বেরোতে পারেননি, আরেকজন প্যারাসুটে করে বেঁচে যান।”

শুধু জর্ডানেই নয়, ইরাকেও তার বীরত্ব চরমে পৌঁছায়। সাতই জুন, ইরাকের এইচ-থ্রি বিমানঘাঁটি আক্রমণ করার সময় ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে জড়ান তিনি। ‘বিসমিল্লাহ’ উচ্চারণ করে যুদ্ধে নামা সাইফুল একটি মিরাজ বিমান গুলি করে আকাশে ভস্মীভূত করেন। আরেকটি বিমান ধ্বংস করার সময় তিনি নিজেই প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন টান এবং চাপের কারণে।

তার সহযোদ্ধা এহসান এবং সমীরও একেকটি শত্রু বিমান ধ্বংস করেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সাইফুল আজম হয়ে ওঠেন এই অভিযানের কিংবদন্তি।

এইচ-থ্রি অভিযানের সময় ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর তীব্র ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাদের তিনটি বিমান ধ্বংস হয়, একজন পাইলট ও নেভিগেটর নিহত হন, এবং দুজন ধরা পড়েন। এমন ব্যর্থ অভিযানের পর ইসরায়েলের সমালোচকরা একে “দুঃস্বপ্নের অভিযান” বলে অভিহিত করেন।

সাইফুল আজমের এই সাফল্যে তাকে জর্ডান সরকার 'উইসাম আল-ইসতিকলাল', ইরাক সরকার 'নুত আল-সুজাত' এবং পাকিস্তান সরকার 'সিতারা-ই-বাসালাত' পদকে সম্মানিত করে। একমাত্র বাঙালি পাইলট হিসেবে তিনি এই তিনটি দেশের উচ্চ সামরিক সম্মান লাভ করেন।

১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে সাইফুল আজম বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পরে তিনি পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

২০০১ সালে তার নাম 'লিভিং ঈগল' হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল হল অফ ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত হয়। তার বীরত্ব শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, ইসরায়েলেও প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি ২০২০ সালে তার মৃত্যুর পর ইসরায়েলি সংবাদপত্রগুলো তাকে স্মরণে বিশেষ ফিচার ছেপেছিল।

সাইফুল আজম এক মহানায়ক, এক সাহসী সৈনিক, যার আকাশজয়ী গাঁথা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন সেই বিরল পাইলট যিনি অস্ত্রধারী হয়ে শান্তির কথা বলতেন, আর যুদ্ধে নামতেন বিশ্বাস আর বুদ্ধির দৌলতে।

তার মতো সাহসী ও দক্ষ পাইলট হাজার বছরে একজনই জন্ম নেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের আকাশযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator