আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা 'আয়নাঘরে' গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালীন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আজ, রোববার দুপুরে শুনানির সময় তিনি সরাসরি দাবি করেন, বাংলাদেশে গুমের মতো গুরুতর অপরাধের সরাসরি নির্দেশ দিতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এবং সেই নির্দেশ কার্যকর করার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
প্রসিকিউটরের এই বক্তব্য ট্রাইব্যুনালের এজলাসে এবং বাইরে উপস্থিত সকলের মধ্যে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, গুমের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী পরিবারগুলো শুধু স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করত না, বরং তাদের নিয়মিতভাবে হয়রানিও করা হতো।
তিনি আরও দাবি করেন, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে একসময় গণভবনে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই একটি 'নাটক' সাজাতেন। প্রসিকিউটরের এই অভিযোগ বর্তমান রাজনৈতিক এবং আইনি প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুতর তাৎপর্য বহন করে।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম-সংক্রান্ত সকল 'অপারেশন'-এর মূল দায়িত্ব পালন করতেন লে. কর্নেল (অব.) মখছুরুর হক। তিনি অবসর গ্রহণের পরেও এই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
আইনজীবীরা মনে করছেন, চিফ প্রসিকিউটরের এই দাবির ভিত্তিতে মামলার গতি-প্রকৃতি ভবিষ্যতে আরও জটিল দিকে মোড় নিতে পারে। গুম ও নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের সঙ্গে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নাম সরাসরি যুক্ত হওয়ায়, এই মামলার শুনানি ও রায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গভীর মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে।
ট্রাইব্যুনালের সামনে চিফ প্রসিকিউটরের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দেশে চলমান থাকলেও, গুমের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের নাম উঠে আসা এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই মামলার পরবর্তী ধাপ এবং ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তগুলো দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি এখনও চলমান রয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল সকল পক্ষের বক্তব্য শুনে পরবর্তী নির্দেশ দেবেন।
ঘটনাটির সামগ্রিক গুরুত্ব বা ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য: চিফ প্রসিকিউটরের এই সরাসরি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করল, যা বাংলাদেশে গুমের রাজনীতি এবং আইনি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।



















