চরমোনাই পীর বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান দেশের পুনর্গঠনের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে ইসলামের আদর্শই হতে পারে জাতির পথনির্দেশনা।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, যিনি পীর সাহেব চরমোনাই নামে পরিচিত। তিনি বলেছেন, দেশের রাজনীতিতে বহু আদর্শ, বহু দলের শাসন পাল্টেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে স্থায়ী উন্নতি আসেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সমাজে সন্ত্রাস বেড়েছে এবং মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক অবস্থা অবনতির দিকেই গিয়েছে।
তিনি মনে করেন, ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান জাতিকে নতুনভাবে পুনর্গঠনের একটি সুযোগ এনে দিয়েছে—একটি এমন সুযোগ, যেখানে পুরনো ব্যর্থতা পেছনে ফেলে নতুন ভিত্তির ওপর দেশকে দাঁড় করানো সম্ভব। এই প্রেক্ষাপটে তিনি দেশের পুনর্গঠনের মূল দিশা হিসেবে ইসলামের হাজার বছরের লালিত আদর্শকে সামনে আনার আহ্বান জানান।
চাঁদপুর-৩ সংসদীয় আসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে এখন ইসলাম বিষয়ে সচেতনতা ও আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত এবং এই পরিবর্তনের চাহিদা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো না যায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বর্তমান নেতৃত্বকে ক্ষমা করবে না।
তার বক্তব্যে আরও উঠে আসে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার একটি দলকে সন্তুষ্ট করার জন্য জনগণের গণদাবি উপেক্ষা করে একই দিনে গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার দাবি, এই সিদ্ধান্ত জনগণের চাওয়া বা সুবিধাকে বিবেচনায় নিয়ে হয়নি, বরং রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই তা গৃহীত হয়েছে।
কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর-৩ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী জয়নাল আবেদিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি মাওলানা মাকসুদুর রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা।
চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত এ কর্মশালায় চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রায় দেড় সহস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালাটি নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্য, এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে।
পীর সাহেব চরমোনাইয়ের ভাষায়, দেশকে নতুন পথে এগিয়ে নিতে হলে ইসলামের চিরায়ত মূল্যবোধ, ন্যায়নীতি ও সুশাসনকে ভিত্তি করতে হবে। তার দাবি, দেশে নতুন প্রজন্ম এখন একটি ন্যায্য ও আদর্শভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চায়, আর ইসলামের নীতি-আদর্শই সেই চাহিদা পূরণে সক্ষম।
এই কর্মশালাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান, নেতৃত্বের বক্তব্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর কাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, পীর সাহেব চরমোনাইয়ের এই বক্তব্য আগামী নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে উঠতে পারে।



















