close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

চান্দিনার ওসি–এসআইয়ের অপকর্মে উত্তপ্ত এলাকা, আইজিপি বরাবর অভিযোগ..

Rabiul Alam avatar   
Rabiul Alam
****

কুমিল্লার চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম ও থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্য, দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলা, মামলা নিয়ন্ত্রণে ভয়ভীতি প্রদর্শন, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং ‘কথিত বিচারক’ নিয়োগ দিয়ে বিচার–বাণিজ্য পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের বরাত এবং অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‎আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য:-
‎স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এ দু’জন কর্মকর্তা চান্দিনা থানায় যোগদানের পর এলাকায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক লেনদেন, সামাজিক বিরোধ, জমি–জমা সংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় হঠাৎ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। অভিযোগকারীরা বলছেন—ওসি ও এসআই মিলে থানাকে কেন্দ্র করে একটি সুসংগঠিত ‘সিন্ডিকেট বাহিনী’ তৈরি করেছেন, যারা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় বিরোধে সালিশ, বিচার ও সমাধানের নামে নানা ধরনের অনিয়ম চালাচ্ছে।

‎ওসি জাবেদ উল ইসলামের পূর্বের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড:- জানা যায়—চান্দিনায় বদলি হওয়ার আগে তিনি বুড়িচং থানার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়িতে ইনচার্জ (আইসি) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ই তার বিরুদ্ধে মাসোয়ারা নেওয়া, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কাজ করা, আটক–বাণিজ্য চালানো ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তনের পর তাকে হেমনা থানায় ওসির দায়িত্ব দেওয়া হলেও পরে আবার তিনি চান্দিনায় বদলি হন। স্থানীয়রা বলছেন—চান্দিনা থানায় আসার পর তার আচরণ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

‎এসআই ইমামের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ:-
‎কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া এসআই ইমাম মনোহরগঞ্জ থানায় দীর্ঘদিন চাকরি করার পর বদলি হয়ে চান্দিনা থানায় যোগ দেন। থানায় যোগদান করার পরপরই তাকে সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সহকর্মীরা বলছেন—তিনি বিভিন্ন দালাল ও অপরাধীদের নিয়ে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধে ‘বিচারক’ নিযুক্ত করেন এবং টাকার বিনিময়ে ঘটনার তদন্ত, সমাধান ও মামালা নিয়ন্ত্রণ করেন।

‎অভিযোগ: ভুক্তভোগীদের ওপর হুমকি ও অপেশাদার আচরণ:-
‎ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—এসআই ইমাম থানায় এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, সেবা নিতে গেলে হেনস্তা করেন এবং মামলা করতে চাইলে ভয়ভীতি দেখান। গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তের নামে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে অর্থ নেওয়া, পরে অভিযুক্তদের বাঁচাতে ‘কথিত বিচারক’ নিয়োগ দেওয়া এবং বাদীকে চাপে রাখা—এমন একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‎নারী ভুক্তভোগীর মামলায় অসদাচরণ ও হামলার ঘটনা:- জমি–জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক নারী সাক্ষীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ আসে ১৬ নভেম্বর। অভিযোগটি চান্দিনা থানায় জমা দিলে এসআই ইমাম অভিযোগকারীকে হয়রানি করতে থাকেন। তিনি তদন্তের নামে সমাজের চিহ্নিত অপরাধীদের “বিচারক” হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানান।

‎২৬ নভেম্বর ভুক্তভোগী ওই নারী ওসির শরণাপন্ন হলে এসআই ইমাম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং ওই নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। সেদিন বিকেলে এসআই ইমাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত না করে অভিযুক্তদের উস্কে দিয়ে চলে যান। এরপর অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার স্বামীকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে দ্বিতীয় দফায়, এবং পরে হাসপাতালে পৌঁছার সময় তৃতীয় দফায় হামলার ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় ভুক্তভোগীর ছেলে ও আত্মীয়রা। তারা প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।

‎ভুক্তভোগীরা ওই নারী জানিয়েছেন—২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসআই ইমাম তার ব্যবহৃত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে উল্টো তাদের গ্রেফতারের হুমকি দেন।

‎সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ:- 
‎ঘটনার সত্যতা জানতে ২৯ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিক থানায় গেলে এসআই ইমাম তাদের পরিচয় জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং একজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে সাংবাদিকরা ওসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাকে থানায় পাওয়া যায়নি এবং পাঠানো বার্তারও কোনো জবাব দেননি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী রবিবার কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে মারধরের ঘটনায় কয়েকজনকে আসামি করে সোমবার কুমিল্লা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন বলে জানা যায়।

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator