কুড়িগ্রামের রৌমারীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চায়ের দোকান থেকে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
চায়ের দোকানে বসেই পরিকল্পনা—এর মধ্যেই পুলিশি ফাঁদ! রৌমারীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একজন শীর্ষ নেতাকে নাটকীয় অভিযানে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের রৌমারী শহরের টিএনটি মোড় এলাকার একটি চায়ের দোকানে বসে থাকাকালীন তাকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেন খান (২৬) রৌমারী উপজেলার ইকবাল হোসেনের ছেলে এবং বর্তমানে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচিত। নিষিদ্ধ সংগঠনের নামে বিভিন্ন গোপন মিটিং, লকডাউন কার্যক্রম সমর্থন এবং স্থানীয়ভাবে কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই নজরদারি চলছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইমরান প্রায়ই ওই টিএনটি মোড়ের চায়ের দোকানে বসে বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনা করতেন। বৃহস্পতিবারও সেই দোকানে বসে কয়েকজন অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময়েই পুলিশ বিশেষ অভিযানে তাকে ধরে ফেলে।现场ে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, "সব কিছু এত দ্রুত হয়েছে যে কেউ বুঝতেই পারেনি পুলিশ আগে থেকেই ওঁত পেতে ছিল।"
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক জানান, “নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষ থেকে লকডাউন কর্মসূচি সমর্থন ও এর প্রস্তুতির গোপন তথ্য আমাদের কাছে আসে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই টিএনটি মোড় এলাকায় অভিযান চালাই। ইমরান হোসেন খানকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “পরে তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতের নির্দেশে ইমরানকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।”
এই ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল এবং সময়মতো পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ধরনের নাশকতার চেষ্টা হতে পারত। অন্যদিকে, ইমরানের পরিবার দাবি করছে—তিনি নির্দোষ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, রৌমারীতে নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও মাঝে মাঝে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। ইমরান দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র গোপনে সক্রিয় ছিল।
এদিকে, এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজনীতি থেকে দৌড়ে থাকা কিছু নেতাই এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশের এই অভিযান ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড দমনে ভূমিকা রাখবে।
ঘটনার পর টিএনটি মোড় এলাকা পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছে এবং গোপন কোনো তথ্য থাকলে তা জানানোর আহ্বান করেছে।
ইমরানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তার অনুসারীরা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে সাহস না দেখালেও স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন—এটি নিষিদ্ধ সংগঠনের পুনরুত্থান রোধে একটি বড় পদক্ষেপ।



















