ভারত সরকার নতুন করে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। গুজরাট থেকে প্রায় ২০০ জন মানুষকে সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে। তাদেরকে সরিয়ে আনার পর এখন চলছে আনুষ্ঠানিকতা—শেষ হলে এই মানুষদের বাংলাদেশে 'পুশ ইন' করা হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ নিশ্চিত করেছে, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) গুজরাটের ভাদোদরা থেকে আনা এসব মানুষকে বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) হাতে তুলে দিয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী।
ভারতের গুজরাটে গত দুই মাস ধরে চালানো হয় ‘অবৈধ অভিবাসী’ চিহ্নিত করতে বিশেষ অভিযান। অভিযানে বেশ কিছু ‘বাংলাদেশি’ শনাক্ত করার দাবি করে গুজরাট পুলিশ। আটক হওয়া ব্যক্তিদের ভাদোদরা শহরে একটি অস্থায়ী বন্দিশিবিরে রাখা হয়। এরপর শুরু হয় যাচাই-বাছাই এবং ‘দেশে ফেরত পাঠানো’র প্রক্রিয়া।
গুজরাট পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এদের মধ্যে বেশিরভাগই নিশ্চিত বাংলাদেশি। কেউ কেউ বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাদের সবাইকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি এয়ারবাস A321 মডেলের ফ্লাইটে করে সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত ও প্রক্রিয়াটি এবার একটু ব্যতিক্রম। সাধারণত রেল বা সড়কপথে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো হলেও এবার বিমানযোগে সীমান্তে এনে বিএসএফের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটি কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নজিরবিহীন ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, এই ব্যক্তিদের পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাগুলোতে রাখা হয়েছে। এখন চলছে বাকি কাগজপত্র যাচাই। এরপর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে তাদেরকে ‘পুশ ইন’ করা হবে।
বাংলাদেশে পুশ ইন অর্থাৎ জোর করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে বিষয়টি সবসময়ই দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এবার যেহেতু বিমানযোগে এনে এই কাজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না আসলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে। অতীতেও এমন বহু ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানযোগে সীমান্তে এনে ‘পুশ ইন’ করার এই পদ্ধতি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন অনুযায়ী কতটা বৈধ—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যদি এসব মানুষ সত্যিই বাংলাদেশি হন, তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করলেই পারত ভারত সরকার।
কিন্তু ভারতের হঠাৎ এধরনের পদক্ষেপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে বলে মনে করছে অনেকেই। বিশেষ করে ভারতের আসন্ন কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন সামনে রেখে 'অবৈধ অভিবাসী' ইস্যু তুলে ধরে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
গুজরাট থেকে ভাদোদরা, সেখান থেকে বিমান—সবকিছুই ছিল অত্যন্ত গোছানো পরিকল্পনার অংশ। এখন বাকি শুধু আনুষ্ঠানিক অনুমতি এবং ‘পুশ ইন’। তবে বাংলাদেশ এভাবে ‘অনানুষ্ঠানিক ফেরত’ মেনে নেবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।