close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ভেজাল খাদ্যে নীরব ঘাতক:মানব জীবন   চরম সংকটে

Nur A Alom avatar   
Nur A Alom
নুর এ আলম

 

​খাদ্য আমাদের জীবনধারণের মূল ভিত্তি। অথচ, এক শ্রেণির অর্থলোলুপ অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে এই খাদ্য আজ পরিণত হয়েছে বিষাক্ত মারণফাঁদে। বাজারে এখন খাঁটি খাদ্য খুঁজে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে ফলমূল, মাছ-মাংস, এমনকি দুধ ও শিশুখাদ্য পর্যন্ত ভেজালের করাল গ্রাসে জর্জরিত। খাদ্যে ভেজালের প্রভাব শুধুমাত্র অর্থক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানব জীবনে ডেকে আনছে দূরারোগ্য ব্যাধি ও অকালমৃত্যু। 

​মানবদেহে ভেজালের বহুমুখী আঘাত
​ভেজাল খাদ্যের কারণে মানবদেহে এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যা ক্ষতির শিকার হচ্ছে না। ক্ষতিকর রাসায়নিক ও অপদ্রব্যযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা।

১.ক্যান্সার ও কিডনি বিকল: ফরমালিন, কার্বাইড ও টেক্সটাইল রং-এর মতো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলি লিভার ও কিডনির কোষকে ধ্বংস করে। এর ফলস্বরূপ দেশে ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, ও কিডনি ফেইলিওর রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। 

২. হজমের সমস্যা ও পেটের রোগ: ভেজাল মসলা, চক পাউডারযুক্ত আটা এবং নিম্নমানের তেল পরিপাকতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার, হজমের গোলযোগ, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া এবং পেটের অন্যান্য জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে।

৩.স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা: বিশেষত শিশুরা ভেজাল খাদ্যের সবচেয়ে বড় শিকার। কৃত্রিম রং ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাবার তাদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত করছে এবং তাদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা, অনিদ্রা, এমনকি মানসিক প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

৪. হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ: খাদ্যদ্রব্যে মেশানো বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং ভেজাল চর্বি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, ডায়াবেটিসে ভুগছে এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

​ভেজাল রোধে করণীয়: সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা
​এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা—এই তিন পক্ষকেই একযোগে কাজ করতে হবে।

​১. কঠোর আইন প্রয়োগ ও নজরদারি: খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান কঠোর আইন (যেমন বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪)(নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩, Safe Food Act, 2013)
 এর যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণের প্রতিটি স্তরে নিয়মিত ও নিবিড় নজরদারি বাড়াতে হবে।
​২. ভোক্তার সচেতনতা বৃদ্ধি: ভোক্তাদের সচেতন করাই হলো ভেজাল প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। খাদ্য পরীক্ষার যন্ত্র  সহজলভ্য করা, ভেজাল খাদ্য চিহ্নিত করার উপায় নিয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালানো এবং কোনো অনিয়ম দেখলে তা রিপোর্ট করার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস  তৈরি করা জরুরি।
​৩. নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা: ব্যবসায়ীদের মধ্যে নৈতিকতার মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করার জন্য কঠোর শাস্তির পাশাপাশি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

​ভবিষ্যতের সুস্থ জাতি গঠনে অঙ্গীকার
​ভেজাল খাদ্যের এই দৌরাত্ম্য কেবল জনস্বাস্থ্যের জন্যই হুমকি নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান করে গড়ে তুলতে হলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি। তাই সরকারের পাশাপাশি সকল নাগরিককে এই বিষয়ে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। ভেজালকে সম্মিলিতভাবে 'না' বলার মাধ্যমেই একটি ভেজালমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব।

Комментариев нет


News Card Generator