close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতের দালাল প্রার্থীদের ভোট দেবেন না: মাহমুদুর রহমান

JAKIR HOSSAIN avatar   
JAKIR HOSSAIN
‘সামনের জাতীয় নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভারতের দালাল প্রার্থীদের ভোট দেবেন না।’..

তিনি বলেন, ‘আমরা দল বুঝি না। যদি ভারতীয় দালালমুক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারি তাহলে প্রয়োজনে সেই প্রতিনিধি ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনার এলাকায় রাজপথে নেতৃত্ব দেবেন।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) যশোরে আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে একথা বলেন ড. মাহমুদুর রহমান। বহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র প্রাচ্যসংঘ আয়োজিত এই সভা বিকেলে যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য আখতার ইকবাল টিয়া এতে সভাপতিত্ব করেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আগামী তিন মাস পর দেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। এজন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। ঘোষণা দিতে হবে আপনারা নির্বাচনে কারচুপি করবেন না। নির্বাচনে সহযোগিতা করবেন এবং ফলাফল মেনে নেবেন। একটা চার্টার দিতে হবে আপনাদের।

নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে দিল্লির সকল ষড়যন্ত্র আর দাদাগিরি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে, ভারত কোনোভাবেই চাইবে না আমাদের দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সেজন্য দায়িত্ব তরুণদেরকেও নিতে হবে। তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে ভারতের সাথে দালালি করে কেউ এদেশে আর ক্ষমতায় যেতে বা টিকে থাকতে পারবে না।’

ড. মাহমুদুুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে তরুণরা দেশকে শুধু ফ্যাসিবাদ মুক্তই করেননি, একটি নতুন বন্দোবস্ত কায়েম করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। সেই বন্দোবস্ত হলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। যা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তরুণদের স্বপ্ন ও আবেগের সাথে বেঈমানি করা যাবে না। তাহলে এই জাতি কাউকে ক্ষমা করবে না।

মাহমুদুর রহমান বক্তব্যের শুরুতে জুলাই আন্দোলনের শহীদ আনাসের কথা স্মরণ করে বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে যখন তরুণরা একের পর এক শহীদ হচ্ছিলেন তখন আনাস তার মায়ের কাছে একটি চিঠি লিখে রেখে সেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার ভাইয়েরা যখন রাস্তায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে জীবন দিচ্ছেন তখন আমি ঘরে থাকতে পারলাম না।’

‘আনাসদের মত শিশুদের জীবনদান ভুলে যাবেন না’ উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করবেন না। তাদের স্বপ্নটাকে বোঝার চেষ্টা করবেন। কীভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন তা বুঝবেন।’

শেখ হাসিনার দেশে ফেরার আলোচনা প্রসঙ্গে মাহমুদর রহমান বলেন, ‘আপা আর ফিরবেন না। এই চ্যাপ্টার ক্লোজড।’

তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে যখন শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সংগঠিত হচ্ছিল তখন আমি আমার দেশের মাধ্যমে বলেছিলাম ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’। তখন কোন রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদ শব্দটি উচ্চারণ করতো না। তারা আমাকে একজন আপদ, মৌলবাদী বলতেন। ২০১৮ সালে বলেছিলাম পৃথিবীতে কোথাও কোনো ফ্যাসিস্টের পতন বিপ্লব ছাড়া সম্ভব হয়নি। হাসিনার পতনও বিপ্লবের মাধ্যমে হতে হবে। সে সময়ও আমাকে বলা হলো আমি একজন উগ্রবাদী। প্রশ্ন করা হলো বাংলাদেশে বিপ্লব কীভাবে সম্ভব হবে, বিপ্লবী কই। কিন্তু, আনাসসহ এদেশের তরুণরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তারাই বিপ্লবী।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই সরকার বিপ্লবী সরকার। কিন্তু তারা নিজেরা বুঝতে পারেনি। তারা বলেন তারা অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু,যদি বুঝতেন যে তারাই প্রকৃত বিপ্লবী সরকার তাহলে প্রতিটি স্তর থেকে ফ্যাসিবাদের উচ্ছেদ হতো। তা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘৭১ সালে পাকিস্তানি সরকার এদেশের মানুষের ওপর জুলুম চালিয়েছিল। তাদের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ লড়াই করে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু, প্রকৃত স্বাধীনতা আসেনি। তখন শেখ মুজিবের মাধ্যমে এদেশে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল ভারত। দেশে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা আসে মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর।

সেই স্বাধীনতা ২০০৯ সালে হরণ করা হয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। যা ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে এদেশের ছাত্র-জনতা পুনরুদ্ধার করেছেন। এই বিপ্লবের মাধ্যমে তরুণদের একটা রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটেছে। কোন শক্তিই নেই তাদেরকে অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করতে পারে।’

ড. মাহমুদুর রহমান তরুণ প্রজন্মকে বাংলার প্রকৃত ইতিহাস ও সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য চর্চা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে বাংলার প্রকৃত ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে হবে। যদি আমরা আমাদের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পারি তাহলে কোলকাতার ব্রাহ্মণ্যবাদ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সাংস্কৃতিক বিজয় হলে রাজনৈতিক বিজয় হবে। আর রাজনৈতিক বিজয় হলে দিল্লির আধিপত্য ধ্বংস হবে।’

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এবং লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান।

আলোচনা সভার শুরুতে সামিউল আজিম, সোহানসহ জুলাই বিপ্লবের চার ছাত্র প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ বলেন, দেখে মনে হচ্ছে এক বছরে তারুণ্যের ঝাঁঝ একটু কমে গেছে। তা না হলে দিল্লিতে বসে অনলাইনে একটা কর্মসূচি ঘোষণা করলো ফ্যাসিস্ট আর তার প্রতিবাদে রাজপথে তরুণদের সেভাবে দেখা গেলো না। তাহলে গ্যাপটা কোথায়?

তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যে তেজ, আবেগ ও আকাঙ্খা ছিল তা যেন অব্যাহত থাকে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, তরুণরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে ভারত আমাদের বন্ধু নয়। তারা সম্প্রসারণবাদী ও আগ্রাসী।

তারা এও প্রমাণ করেছেন, আওয়ামী লীগ সবসময় এদেশকে ভারতের তাবেদারি করেছে। তাদের স্বার্থ দেখেছে। একইসাথে তরুণরা প্রমাণ করেছেন, এদেশে ভারতের স্বার্থে আর কোনো রাজনীতি চলবে না।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করবেন। পাশাপাশি ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে সংঘটিত আরও যেসব গণহত্যা যেমন-বিডিআর, শাপলা চত্বর এবং মোদী বিরোধী আন্দোলনের সময় চালানো গণহত্যারও বিচার করতে হবে।

এর আগে দুপুরে ওবায়দুল বারী হলে প্রাচ্যসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মাহমুদুর রহমান।

সেখানে তিনি বলেন, জুলাই সনদ প্রশ্নে প্রফেসর ইউনূসের সরকার অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। জামায়াতের প্রধান দাবি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মেনে নিয়েছে সরকার। বিএনপির প্রধান দাবি জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের সিদ্ধান্তও হয়েছে। যদি এটা না করা হতো তাহলে দেশে ভয়াবহ অবস্থা হতে পারতো।

তিনি বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর হাসিনার সহযোগিতায় এদেশের স্বাধীনতাকে পদানত করে রেখেছিল ভারত। সেটা এখন অতীত। আপা আর ফিরবে না।

তিনি প্রশ্ন করেন, রাজনীতিকরা কি মানেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় থ্রেট? বড় তিন রাজনৈতিক শক্তির কাছে এই প্রশ্ন রাখতে হবে।

মতবিনিময় সভায় মাহমুদুর রহমান উপস্থিতদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। এই সময় তিনি মন্তব্য করেন, বিএনপি-জামায়াত ভারত-প্রশ্নে দ্বিধাগ্রস্ত। এনসিপিই একমাত্র ভারত-প্রশ্নে সুদৃঢ়। কিন্তু তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার মতো অবস্থা এখনও হয়নি। সেই কারণে প্রার্থীদের কাছে প্রশ্ন রাখতে হবে, ভারতপ্রশ্নে আপনাদের অবস্থান কী? যদি এটা নিশ্চিত করা যায় যে, ভারতের কোনো দালাল পার্লামেন্টে প্রবেশ করবে না, তাহলে এদেশকে আর পদানত করতে পারবে না পাশের শক্তিশালী রাষ্ট্র।

মতবিনিময় সভায় সৈয়দ আবদাল আহমদ ছাড়াও প্রাচ্যসংঘের সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments found


News Card Generator