close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বেতাগীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যয়ে সাধারণ মানুষ, কাজে আসে না কাবিখা-কাবিটা..

Mynews 24 avatar   
Mynews 24
অবকাঠামো সংস্কারে ২০২২-২৩ সালে কাবিটা-কাবিখা ২ কোটি ৩০ লাখ ও ২০২৩-২৪ সালে কাবিটা-কাবিখা ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।..

 

হোসাইন সিপাহী, বেতাগী, বরগুনাঃ

 

দেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনা। যেখানে প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এককের পর এক বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সিডর হয়ে থাকে। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ লেগেই থাকে। গত ১৬ বছরে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়গুলোতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় এই জনপদের মানুষের।

২০০৭ সালে ১৫ নভেম্বর সিডর, ২০০৮ সালে ৩ মে নার্গিস, ২০০৯ সালে ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালে ১৬ মে মহাসেন, ২০১৬ সালে ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালে ৩০ মে মোরা, ২০১৮ সালে ১১ অক্টোবর তিতলি, ২০১৯ সালে ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালে ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালে ২০ মে আম্ফান , ২০২২ সালে ২৫ অক্টোবরে সিত্রাং, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বরের মোখা, ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর হামুন, ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর মিধিলি এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৬ মে রেমাল  আঘাত আনে।

এ বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলো উপকূলীয় মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি করেছে। এসময় সমুদ্রের লোনাপানি বিভিন্ন বেড়ি বাঁধ ভেঙে লোকালয়সহ ফসলের মাঠে প্রবেশ করছে। আর এ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষের বসবাসে দুর্বীষ হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লোনাপানির আধিক্য। আর নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানি। উপকূলীয় জেলা বরগুনার বেতাগী উপজেলায় প্রতিনিয়ত নদ-নদীর বাঁধ ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল (বঙ্গোপসারের মুখোমুখি) দেশের অন্যতম দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। জলবায়ু প্রভাবের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ এলাকার বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠী বা মানুষের গ্রাম থেকে শহরে আগমন, স্থান বদল, কয়েকদিন কিংবা বহু বছর নিজের আদি বা স্থায়ী বাড়ি থেকে অনুপস্থিতি, সাময়িক অভিবাসন বা স্থায়ী আবাস পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে।

উপজেলা শহর বিষখালী নদীর তীরে অবস্থান করলেও এর দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে রয়েছে পায়রা নদী। চারপাশ ঘীরে নদী খালময়। উপজেলার বেশিরভাগই বন্যা,অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

উপজেলায় পৌরশহর সহ সাতটি ইউনিয়ন রয়েছে। যার বেশিরভাগ অংশ বিষখালী নদীর তীরবর্তী অবস্থিত। ফলে প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্থ হয়ে যায়। এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে প্রতি বছর ইউনিয়ন পরিষদগুলো বাজেট নির্ধারন করে থাকে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে অতি নগন্য বরাদ্দ পায়। বিশেষ করে রাস্তা ও বাধ নির্মাণে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে গ্রামীন পর্যায় অবকাঠামো সংস্কারে ২০২২-২৩ সালে কাবিটা-কাবিখা ২ কোটি ৩০ লাখ ও ২০২৩-২৪ সালে কাবিটা-কাবিখা ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। যা রাস্তা, মসজিদ, মন্দির খেলার মাঠ সংস্কারে ব্যায় করার থাকলেও তা বেশিরভাগ কাগজে কলমে বিদ্যমান। এই বরাদ্দ ইতোমধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু সংস্করণ শেষ হয়নি।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত বা দুস্থ লোকদের দ্বারা কাজ করার কথা থাকলেও অনেক কাজের ক্ষেত্রে যে এলাকা বা ওয়ার্ড বা বাড়ির কাজ হয় সেই বাড়ির স্বচ্ছল ব্যাক্তিরাই করে থাকে। ফলে বঞ্চিত হয় সাধারণের মাঝে বেঁচে থাকা অসহায়রা। আবার দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের স্বচ্ছ তালিকা করে তাদের এই সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তদারকির অভাবে তা বাস্তবতার মুখ দেখে না।

উপজেলা প্রতি বছরই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। এর থেকে পরিত্রান পেতে দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন । সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ একেবারে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প বা টেকসই উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে দেখা যায় না তাদের । পুনঃসংস্কার নিয়েই পড়ে থাকে। ক্রমাগত এমন উন্নয়ন ফলপ্রসূ হবে না। দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প যা জলবায়ু সহনশীল তা হাতে নেওয়া দরকার। এইসকল প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা অপরিহার্য। প্রতিটি ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নে মনিটরিং টিম গঠন করে তা তদারকি করবে যাতে ঠিকঠাক ভাবে কাজ সম্পুর্ণ হয় কিনা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদকর্মীদের নিয়ে এমন একটি কমিটি করতে হবে যারা সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করবে। এইসকল কাজের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও শুভঙ্করের ফাঁকি বলে কথা আছে। ইউনিয়ন পরিষদ এগুলো নিয়ে কাজ করার কথা সেখানে তারাই সমম্বয় করে লোপাট করে বরাদ্দ। যার ফলে স্বচ্ছতা দেখা যায় না। কাগজে কলমে কাজ শেষ হয়ে যায়। ভাইরে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। কোনোদিন মাছ পাই কোনা দিন পাই না।  নদীর কুলে বাড়ি ছিল । বাপ দাদায় উঠাইছিল। কিন্তু হঠাৎ ঘুমের মধ্যে খালি খালি বাতাস আর বাতাস। চালে ডটন উড়াইয়া লইয়া গেল, মাইয়া পোলারে লইয়া কোনো রকম বের হইয়া পাশের বাড়িতে যাইতে পারি। কিন্তু এদিকে ঘর বাড়ি সব বাতাসে উড়াইয়া লইয়া গেল। ভাইরে ঘর লইয়া ঘেছে তাতেও দুঃখ আল্লে না নদীর তুফানে জোয়াল বাইন্দা একেরপর এক ঘর নদীতে মিল্লা গেল । হেরপর আর জমিতে ঘর উঠাইতে পারলাম না। নদীর পারে ঝুপরি ঘর বানাইয়া মাইয়া পোলারে লইয়া বাইছা আছি। ভাইরে মোগো আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই। এই ঝুপরি ঘরও প্রতি বছর বানান লাগে। বেশি বাতাস হইলেই ভাইঙ্গা পড়ে। ” এভাবেই অশ্রুসিক্ত হয়ে সিডরে হারানো শেষ সম্বল হারানোর ঘটনা বর্ণনা করেন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনার বেতাগী উপজেলার আঃ হালিম।

 

সদর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া এলাকার যুবক মাসুৃম বলেন, শুধু বেতাগী নয় পুরো বিশ্বই এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরি প্রভাবে নিমজ্জিত। ফলে একেরপর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এখান থেকে রক্ষা পেতে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা অনিয়ম রুখতে হবে। কেননা, অনিয়মের ফলে কোটি টাকা খরচ করেও আমাদের রাস্তা বা বাঁধ নির্মাণ করতে পারেনি। সবই খেয়ে ফেলে, অফিসাররাও খায়। যাদের এদিকে নজরদারি বাড়িয়ে কাজ করা উচিত। কিন্তু আমরা হতাশ। তাই আমরা চাই টেকসই উন্নয়ন। 

৬নং কাজিরাবাদ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে অবহেলিত জায়গাটা নিয়ে আমরা প্রতিনিধিত্ব করি তা হলো গ্রাম। অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন এলাকাগুলো। আমাদের এলাকাগুলো বেশিরভাগই দুর্যোগপ্রবন এলাকায় পড়েছে। ফলে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাটির রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। ভেঙে যায়, মাটি সরে যায়, বাধ ভেঙে যায় ইত্যাদি। ফলে একই রাস্তায় আমাদের প্রতি বছর কাজ করতে হয়। অল্প অল্প বরাদ্দ না দিয়ে আমাদের বৃহৎ একটি বরাদ্দের মাধ্যমে টেকসই প্রকল্প হাতে নেওয়া যায় তাহলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। শুধু চলাচলে সমস্যা হয় এমন না। কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

উপজেলা পিআইও অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়েও তাকে সবসময় পাওয়া যায় না। যেখানে তার উপস্থিতি এবং তদারকিই পারে এই দুর্ভোগ লাঘবে অন্যতম অবদান রাখতে। কিন্তু সেখানে তিনি নিজেই ফাঁকি বাজি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার অফিস থেকে জানা যায়, প্রকৃতগতভাবে এই সকল উন্নয়নে যে পরিমাণের চাহিদা বাড়ছে তা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ আসে না। এছাড়াও এই দপ্তরে জনবল বাড়ানো দরকার তা সরকার জানলেও বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি দেখছেন না। ফলে  তদারকি সহ মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে শতভাগ কাজ করতে পারছে না।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হরে কৃষ্ণ অধিকারী বলেন, বেতাগী একেবারে বিষখালী নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব বেশি পড়ে। প্রায় সময়েই গ্রাম তলিয়ে যায়, কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। যার সমাধান আমাদের হাতে থাকে না। তবুও দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে কাটিয়ে উঠা সম্ভব। যেমন বিষখালী নদীর তীরে ব্লক ফেলা। এতে করে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।

 

 

 

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator