আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১৫/১২/২০২৪ ০৯:২৬এ এম
সংস্কারের গুঞ্জনে গতি: ছয় কমিশনের প্রস্তাব প্রায় প্রস্তুত
দেশে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে প্রথম ৬টি কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ কিংবা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই তারা এই প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেবে। তবে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুরনো আইনের ভিত্তিতে পুনর্গঠিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে কিছুটা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
প্রস্তাব তৈরির অগ্রগতি
গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণায় গঠিত ছয়টি কমিশন হলো—
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
সংবিধান সংস্কার কমিশন
এই কমিশনগুলো নিজেদের কাজ প্রায় শেষ করেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে অংশীজনদের মতামত নেওয়া শুরু করেছে। এমনকি সাধারণ মানুষের মতামত সংগ্রহে ডিজিটাল জরিপের পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে সরাসরি সভার আয়োজনও চলছে।
সংস্কারের উদ্যোগে বাধা ও বিতর্ক
সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ও দুদকের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে পুরনো আইনের ভিত্তিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কারের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাবও তৈরি করেছে। তবে সরকারের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ এই খসড়া প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে।
এদিকে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনও কমিশনারদের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়ায় তাদের প্রস্তাব কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
প্রতিটি কমিশনের কাজের অগ্রগতি
সংবিধান সংস্কার কমিশন:
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামত নেওয়া হয়েছে।
সারা দেশে বিবিএসের মাধ্যমে জরিপ চালানো হয়েছে।
কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ৬ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেওয়ার আশা রয়েছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন:
সাধারণ মানুষের মতামতের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ নিয়ে খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন:
“কেমন পুলিশ চাই” শিরোনামে অনলাইনে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের পদ্ধতিগত উন্নয়ন এবং অপরাধ দমনে দক্ষতার বিষয়ে খসড়া সুপারিশ তৈরির কাজ চলছে।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন:
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নির্ধারণে কাজ চলছে।
বিশেষজ্ঞ ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রস্তাব পেশ করা সম্ভব হবে।
জনপ্রশাসনে বিতর্কিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই অব্যাহত থাকায় সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সংস্কারের উদ্দেশ্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
দুর্নীতির আশঙ্কা ও টিআইবি পর্যবেক্ষণ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত ১৮ নভেম্বর তাদের ১০০ দিনের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, কমিশনগুলোর কাজ শেষ হওয়ার আগেই গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের সিদ্ধান্ত সংস্কারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সংস্কারের ভবিষ্যৎ: কী অপেক্ষা করছে?
কমিশনগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই প্রস্তাবগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই বাস্তবায়ন করবে, নাকি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে তা কার্যকর করবে?
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সংস্কার বাস্তবায়নের সময়কাল এবং কার্যকর পরিকল্পনা দ্রুত ঘোষণা করা উচিত।