বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১৩/১২/২০২৪ ০৫:৪৫পি এম

হেলাল হাফিজ: বাংলা সাহিত্যের অমর কবি আর নেই

হেলাল হাফিজ: বাংলা সাহিত্যের অমর কবি আর নেই
বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম—হেলাল হাফিজ। ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’—এই অমর পঙ্‌ক্তির রচয়িতা আর আমাদের মাঝে নেই। শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, বেলা আড়াইটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭৪ বছর। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন, যেখানে তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’-এর মাধ্যমে হেলাল হাফিজ বাংলা সাহিত্যে নিজের অসামান্য স্থান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই গ্রন্থের কবিতাগুলো ছিল তাঁর জীবনের সংগ্রাম, প্রেম, দ্রোহ ও যাপিত জীবনের নানা বাস্তবতা থেকে অনুপ্রাণিত। এর মধ্যে "এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়" কবিতাটি বিশেষভাবে জনগণের মনে স্থান করে নিয়েছে। এটি শুধু সাহিত্যের পাঠকদেরই নয়, সমাজের নানা স্তরের মানুষের হৃদয়ও স্পর্শ করেছে।

কিভাবে লিখিত হয়েছিল "এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"
হেলাল হাফিজের বিখ্যাত এই পঙ্‌ক্তিটি লেখা হয়েছিল ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে। সেই সময়কার রাজনৈতিক উত্তেজনা, সংগ্রাম, প্রেম, বিরহ এবং দ্রোহের নানা অনুভূতি থেকেই তার কবিতাগুলো রচিত হয়েছিল। ‘‘যে জলে আগুন জ্বলে’’ কাব্যগ্রন্থে প্রতিটি কবিতা যেন ছিল এক একটি জীবনযুদ্ধের নীরব সাক্ষী। বিশেষ করে ‘অগ্ন্যুৎসব’ কবিতাটি তার কবিতার গভীরতা এবং ব্যক্তিগত দ্রোহের এক শক্তিশালী প্রকাশ। এই কবিতায় হেলাল হাফিজ তাঁর দুঃখ, সংগ্রাম এবং দেশপ্রেমের কথা গভীরভাবে তুলে ধরেন।

কবি তাঁর কবিতায় বলেছেন, ‘‘ছিল তা এক অগ্ন্যুৎসব, সেদিন আমি/ সবটুকু বুক রেখেছিলাম স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে? জীবন বাজি ধরেছিলাম প্রেমের নামে/ রক্তঋণে স্বদেশ হলো,/ তোমার দিকে চোখ ছিল না/ জন্মভূমি সেদিন তোমার সতীন ছিলো।’’

হেলাল হাফিজের কবিতার অমরত্ব
হেলাল হাফিজের কবিতার বিশেষত্ব ছিল তার সরলতা, অথচ গভীরতা। তাঁর কবিতা মানুষের অজানা আবেগ এবং শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার এক শক্তিশালী মাধ্যম ছিল। তার কবিতা কেবল সাহিত্যিক মূল্যেই সমৃদ্ধ নয়, বরং এ দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকেও তুলে ধরেছে।

কবিতার সংখ্যা কম, তবে খ্যাতি অসীম
হেলাল হাফিজ সাহিত্যজীবনে খুব কম কবিতা লিখে বাংলাদেশে এমন খ্যাতি অর্জন করেছেন, যা নজিরবিহীন। তাঁর ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো মানুষের অন্তরে দাগ কেটেছে, এবং এর পরেও তিনি খুব কম সংখ্যক কবিতা লিখেছেন। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’ ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়, যেখানে তাঁর পূর্বের কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোর সঙ্গে নতুন কিছু কবিতা যুক্ত করা হয়। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়, যা তাঁর সাহিত্যকর্মের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

তবে কবি নিজেকে একেবারে আড়ালে রাখতেই বেশি পছন্দ করতেন। দীর্ঘ সময় কোন নতুন গ্রন্থ প্রকাশ না করলেও তার কবিতা চিরকালীন শক্তি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

তাঁর বিদায়ে শূন্যতা
হেলাল হাফিজের মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য এক অনন্য সৃষ্টিকর্তাকে হারালো। তাঁর কবিতার সরলতা, গভীরতা এবং মানবিকতা অমর হয়ে থাকবে বাংলা সাহিত্য ইতিহাসে।

হেলাল হাফিজের মতো কবির মৃত্যুতে দেশ ও সাহিত্যের যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ