ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ৪০৯/১০ ও ৪১/৩ (২১.০ ওভারে)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৯৬/১০ (৯৬.৫ ওভারে)
(তৃতীয় দিন শেষে)
মিরপুর টেস্টে পছন্দের উইকেট দেয়া হয়নি, তিন স্পিনার নিয়েও তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপর চড়াও হতে পারেনি বাংলাদেশ বোলাররা।দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে এই বিলাপ করেছিলেন তামিম। সেই পিচই কিন্তু তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে চরিত্র বদলেছে।
শেষ সেশনে স্পিনারদের বল ঘুরেছে যথেস্ট। এই সেশনে ২ দল ৭ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৬৫ রানে ! প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১৩ রানের লিড নিয়েও জমে উঠেছে মিরপুর টেস্ট। তৃতীয় দিন শেষে ১৫৪ রানের লিড ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তৃতীয় ইনিংসে যতো দ্রুত অল আউট করবে বাংলাদেশ,ততোই মঙ্গল। এই দিনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিয়েছেন লিটন-মিরাজ। ৭ম উইকেট জুটির কল্যানেই ফলো অন এড়িয়েছে বাংলাদেশ।
এই পার্টনারশিপে উইকেটহীন কাটিয়েছে বাংলাদেশ দিনের দ্বিতীয় সেশন। ফলো অন এড়িয়ে লিডের স্বপ্ন ও দেখেছে বাংলাদেশ সমর্থকরা এই পার্টনারশিপে। তবে টি ব্রেকের ১০ মিনিট পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ১২৬ রানের পার্টনারশিপ।
তাতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশ।টি ব্রেকের পর ২৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ শেষ ৪ উইকেট। মাত্র ৩২ মিনিটে লন্ডভন্ড হয়েছে বাংলাদেশের টেল এন্ড।
৫ টেস্টে দৈত্যাকৃতির অফ স্পিনার কর্নওয়াল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিংয়ে (৩২-৮-৭৫-৫) বাংলাদেশকে দিয়েছে কাঁপিয়ে।তৃতীয় দিনে তার দু'টি স্পেলে (১৬-৪-৩৯-২ ও ৫-০-১৭-২) প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানের লিড নিতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনের দিকে চোখ ছিল সবার। তবে যে আশা নিয়ে শুরু করেছিলেন মুশফিক-মিঠুন। তাদেরকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছে সমর্থকরা,তা শেষ পর্যন্ত আশাহত করেছে।
এই সেট দুই ব্যাটসম্যানের আত্মাহুতিতে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন নির্বিঘ্নে পাড়ি দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭৬ রান যোগ করে প্রথম সেশনে হারিয়েছে বাংলাদেশ ২ উইকেট।
মিরাজ-লিটনের এই প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়েছে টি ব্রেকের ২৩ মিনিট পর।কর্নওয়ালের ইয়র্কার ডেলিভারি সুইপ করতে যেয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন (১৩৩ বলে ৭ চার এ ৭১ রান)।রিভিউতেও আম্পায়ার সৈকতের সিদ্ধন্ত গেছে টিকে।
ওই ওভারেই স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন নাইম হাসান (০)। পরের ওভারে গ্যাব্রিয়েলের বলে কভারে ক্যাচ প্র্যাকটিস করে এসেছেন মিরাজ (১৪১ বলে ৬ চার এ ৫৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০৯ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে স্কোর ১০৫/৪-এ ছিল ফলো অনে পড়ার আলামত। ফলো অন থেকে বাঁচতে হলে করতে হবে আরও ১০৫ রান। তৃতীয় দিন এই টার্গেটকে সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিনে অবিচ্ছিন্ন থাকা মুশফিক-মিঠুনের ৩৪ রানের পার্টনারশিপের দিকে তাকিয়ে ছিল সবাই।
তবে উইকেটে মরণ কামড় দিয়ে ১৩৯ মিনিট কাটিয়েও ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। তৃতীয় দিনের প্রথম ঘন্টা পার করতে পারেননি এই জুটি। শর্ট মিড উইকেটে মেয়ার্সকে ফিল্ডিংয়ে আনা হয়েছে। তা দেখেও কর্ণওয়ালের প্রথম স্পেলের দ্বিতীয় ওভারে ফ্লিক শট নিয়েছেন !
তার পরিণতি সৌম্য,তামিমের মতো একই পজিশনে ক্যাচ দিয়েছেন মিঠুন (৮৬ বলে ২ চার -এ ১৫ রান) ! তৃতীয় দিনের ৫০ তম মিনিটে মিঠুনের এভাবে ফিরে যাওয়ায় পার্টনারশিপ থেমেছে ৭১ রানে। ৫ম জুটি থাকাকালে কর্নওয়ালকে মিড অনে সিঙ্গল নিয়ে ২২তম টেস্ট ফিফটি উদযাপন করেছিলেন মুশফিক।
হাফ সেঞ্চুরির পর টেস্টকে টি-২০ মনে করে রানের জন্য তাড়াহুড়া করতে চেয়ে ভুল করেছেন তিনবার ! কর্নওয়ালকে সুইপ করতে যেয়ে পরিষ্কার এলবিডাব্লুউ হয়েও আম্পায়ার্স কলে গেছেন বেঁচে মুশফিক ৫০ রানের মাথায়। সেই কর্নওয়ালের শর্ট বলে লেগ স্লিপ দিয়ে ভাগ্যক্রমে পেয়েছেন বাউন্ডারি।
ফিল্ডার একটু তৎপর থাকলে তখনই থেমে যেতে পারতো তার ইনিংস। পরের বলে নিজেই বাঁচতে চাননি। রিভার্স সুইপ খেলতে পারেন,তা দেখাতে যেয়ে শর্ট কভারে দিয়েছেন ক্যাচ (৫৪)।
এ ধরনের শট শুধু নিজের অপমৃত্যু ডেকে আনেনি-মহা অপরাধও বটে। ১৭০ মিনিটের ইনিংসে মেরেছেন তিনি ৭টি চার। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ ভুগেছে ১৪৩ কেজি ওজনের বিশালদেহী অফ স্পিনার কর্ণওয়াল প্রথম সেশনের একটি স্পেলে ( ৯-৩-২২-২)। লাঞ্চের পর কাটিয়েছেন তিনি উইকেটহীন।
টি ব্রেকের পর তার আর একটি স্পেলে (৫-০-১৭-২) ভেঙ্গে গেছে বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার ও টেল এন্ড। প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানের লিড পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই প্রান্ত দিয়ে স্পিন আক্রমনে বেসামাল করার পরিকল্পনায় শেষ বিকেলে সফল বাংলাদেশ।
অফ স্পিনার নাইম হাসানের দ্বিতীয় ওভারে ব্রাথউইট উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এসেছেন (১৩ বলে ৬)।আম্পায়ার ইলিংওয়ার্থ আপীলের পক্ষে সাড়া দেননি। রিভিউ আপীলে জিতে গেছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম টেস্টে নামতা গুনে উভয় ইনিংসে ৪টি করে শিকারে ফর্মে থাকা অফ স্পিনার মিরাজ তার ৪ ওভারের স্পেলে ৪-০-১৪-১) ফিরিয়ে দিয়েছেন মোজলেকে (২১ বলে ৭)।
সেকেন্ড স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ এই টপ অর্ডার। এই শিকারে রফিক,সাকিব,তাইজুলের পর চতুর্থ বাংলাদেশী বোলার হিসেবে উইকেটের সেঞ্চুরি হয়ে গেছে মিরাজের।
বাংলাদেশ টেস্ট ইতিহাসে প্রথম অফ স্পিনার হিসেবে এই কৃতি গড়েছেন মিরাাজ। রেকর্ডবুকে টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম ১০০ উইকেট ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন মিরাজ।
১০০ উইকেটে ইতোপূর্বে দ্রুততম ছিলেন তাইজুল। ২৫ টেস্টে পূর্ন করেছিলেন উইকেটের সেঞ্চুরি। মিরাজ সেখানে ২৪ ম্যাচে পূর্ন করেছেন সেঞ্চুরি।
শুক্রবার হোমে ১০০ টেস্ট উইকেট শিকারী তাইজুল শনিবার শেষ স্পেলে ঘুরিয়েছেন ছড়ি (৩-১-৩-১)। ক্যাম্পবেল জোড়া পায়ে ডিফেন্স করতে যেয়েও বাঁচতে পারেননি। ব্যাটে বল লেগে হয়েছেন প্লেড অন (৪৮ বলে ১৮) এই উইন্ডিজ ওপেনার।