১৪২১ বঙ্গাব্দ পৌষ মাসের কোন এক প্রথমাংশে আমি পাঠশালায়, পাঠ গ্রহণ করিতেছিলেম। একটি রমনী দ্বার দিয়া গৃহমধ্যস্থে প্রবেশ করিল। তাহার পরনে ছিল সবুজ রঙের জামা।
তাহাকে দর্শন করিবার পর মোর হিয়ার মাঝে প্রেমো বাসনা জাগিয়া উঠিল। আখিঁতে তাহার আফিমের নেশা। তাহার আখিতে মোর আখি পরাতেই আমি নেশার অর্ণবে ভাসিয়া গেলাম। সেই জন্যই বোধহয় কাজী নজরুল ইসলাম বলিয়াছিলেন,"তোমারি আখির মত, আকাশের দুটি তারা।
"সেই তারা এখনো মোর হিয়ার মাঝে বিদ্যমান। মোর পাশে বসিয়া ছিল অপু। তাহার নিকট হইতে সন্ধান লইলাম, রমনীটা কে? কি তাহার অভেদ? কিন্তু তাহার নিকট হয়তে কোনরুপ সন্ধান পাইলাম না।
কিছু সময় অতিবাহিত হইবার পর পাঠশালায় গুরু প্রবেশ করিলেন। তিনি আসিয়া পহেলা সেই রমনীর আভেদ দিলেন। তিনি বলিলেন,এই বালিকাটির নাম "মুক্তি"। সে অদ্য হইতে তোমাদের সহিত পাঠ গ্রহণ করিবে।
সেই সময় হইতে তাহার নাম জানিলাম মুক্তি। সেই হইতে মোর হিয়ার মাঝে একটি নামই লেখা হইয়া গেল মুক্তি। তাহার মোহনার দিকে নিহার করিলে মর্তের সকল বিষাদ ভুলিয়া থাকা যায়। সে দেখিতে সাদা বর্ণের না তবুও তাহার সুশ্রী মোরে মুগ্ধ করিয়াছে।
তাহার মাঝে যে সুশ্রী লুকাইয়া রইয়াছে, তাহা প্রকাশ করিবার মত কোন শব্দ মোর ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক ধারণ করিতে পারে নাই। অনেক রমনী তাহার রুপের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করিবার জন্য রুপচর্চা করে ,কিন্তু সে করে নাই।
তাহারে রুপচর্চা হিনাই তাহারে অত্যন্ত রুপবতী দেখাইতো। তাহার রুপ প্রাত্যহিক না দেখিতে পাইলে আমি উন্মাদ হইয়া যাইতাম। তাহারে দেখিতে-দেখিতে প্রাত্যহিক দিবা-রাত্রি অতিবাহিত হইতে লাগিল।
মোর সাধ জাগিল তাহারে মোর চিত্তের কথন প্রকাশ করা অত্যদিক প্রয়োজন। কিন্তু তাহা প্রকাশ করিবার মত সাহসিকতা মোর হইল না। যদি সে মোরে ভুল বোঝে? তাই মোর কথন অপুকে খুলিয়া বলিলাম। সে বলিল লাবন্যকে।
লাবন্য মোর কথন গুলো বলাতে মুক্তি বলিয়া উঠিল, এইসব মোর দ্বারা সম্ভব নহে! আমি এইসব পছন্দ করিনা। এই বিষয়ে মোরে যদি পুনর কোন কথা বলো তাহলে গুরুর নিকট সালিশ দিব। মোর ধারনা সত্য হইলো।
তার পর থেকে মুক্তিকে এই বিষয়ে কোন কথন বলা হয়নি। শুধু তাহার পিছনে পিছনে যাইতাম কিছু বলিতাম না। মাঝে-মাঝে সে শুধু হাসিতো। সে কি বিনাকারনে হাসিত নাকি তাহার মাঝে কোন রহস্য লুকাইয়া রইয়াছে? তাহার হাসিতে আবার অন্য রকম নেশা।
তাহার নিকট আফিমকে হারমানতে হইবেই। আমিও হারমানিয়াছি। তব প্রণয়ের দিকে হার নহে। এ হার প্রণয়ের অভিমুখে লইয়া যাই। পাঠ গ্রহনের সর্বক্ষণ তাহার রুপ দেখিতাম। তাহার আখি দিকে চেয়ে থাকিতাম। সে এক নেশ!এ নেশা কাছে হারমেনেছে সবাই।
রবীন্দ্রনাথও হারমেনে লেখিয়াছিলেন, "প্রহর শেষে আলোই রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ। " মোরো সর্বনাশ হইয়াছে! মোর কি সর্বনাশ হইয়াছে তাহা প্রকাশ করিতে পারবো না।
কিছু কথন যাইনা চিত্তে সহন, তাহা না প্রকাশ করাই বাহুল্য। দুটি বর্ষ তাহারে দেখিতে-দেখিতে চলিয়া গেল। এদিকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে মোদের পাঠশালা রুপান্তর করিতে হইবে। বিদায় উৎসবে সে নীল রঙ্গের জামা পরিধান করিয়া ছিল।
নীল রঙ্গে তাহারে বেশ মানিয়েছিল। সেদিন তাহার রুপ দেখে মোর শান্ত মন অশান্ত হইয়াছিল। মনে হয়লো তাহারে পুনর কথনটি বলি কিন্তু বলিতে পারিনাই। গুরু মসায় মোদের স্মৃতি ধরিয়া রাখিতে চিত্রে ধারন করিলেন। চিত্র ধারনের সময় আমি তাহার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তাহার অবশ্য কারন আছে। দুটি বর্ষ তাহার পিছনে-পিছনে চলতে-চলতে তাহা মনের অজান্তেই মোর স্বভাবে পরিণত হইয়াছে। এ স্বভাব ভাল নাকি মন্দ কিছুই বুঝিতে পারিনা। তাহার পর হয়তে দুজনের পাঠশালা ভিন্ন হইয়া গেল।
অনেক দিবা তাহারে দর্শন করিনাই। মাঝে-মাঝে তাহার মোহনা দেখিবার আশাই তাহার নিবাসের সামনে দাড়াইয়া থাকিতাম। মাত্র ৩দিন তাহারে দর্শন করিয়াছিলাম। তাহারে না দেখার বিষাদে মোর উন্মাদ হইবার উপক্রম। আমি পাঠ গ্রহনে মননিবেশ করিতে পারিনাই।
এমন সময় সংবাদ পাইলাম তাহার বিবাহ কর্য ঠিক হইয়াছে। পাত্র প্রবাসী। এই সংবাদ শুনিবার পর মোর চিত্তের সকল বাসনা বিলোম হইয়া গেল। এ সময় আমি করিতে পারি তাহা খুজিয়া পাইলাম না। মোর সাধ হইল তাহারে অন্তত চিত্তের কথন বলি।
কিন্তু বলিব কিভাবে? অপুর নিকট মুক্তির মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করিলাম। তাহার মোবাইল নম্বর হইলো ০১৭৬৪★★★★৫০। এখন অবশ্য এই নম্বর ব্যবহার হইতেছে না। এই নম্বরে তলব করিবার পর ওপাস থেকে একটি মধুর কণ্ঠস্বর শুনিতে পাইলাম।
আমি বলিলাম, মুক্তি! কেমন আছো? ভাল। কে আপনি? আমি অমিত। শুনিলাম তোমার বিবাহ কার্য ঠিক হইয়াছে? আপনি ঠিকই শুনিয়াছেন। তুমি হয়তো জানিতে আমি তোমারো প্রণয়ে মত্ত। মোর সাধ তোমারে লইয়া দিবা-রজনী কাটাইবার।
কোন ভাবেই ইহা উচ্ছেদ করা যাই। না! ইহা করিলে মোর পিতা ব্যথিত হইবে। ইহা না করিলে আমি যে নিঃস্ব হইয়া যাইব। তাহাতে মোর কি করিবার আছে? তাহার কথন শুনিবার পর মোর অক্ষি অশ্রু দ্বারা ভাসিয়া গেল।
ওপাস থেকে মোর ক্রন্দন শুনিয়া বলিল, আমি মুক্তি নহে। আমি মুক্তির ভ্রাতাপত্নী। তাহার পাশে ছিল মুক্তি। সে বলিয়া উঠিল,বউঠান! কে তলব করিয়াছে? তুমি কথা বলিলেই বুঝিতে পারিবে। কে বলিতেছেন? আমি অমিত।
কেমন আছো তুমি? ভাল। তুমি? আমি ভাল কিংবা মন্দ থাকি তাহাতে কি কাহারো বিন্দু মাত্র বিষাদ হয়? এমন কথন বলিবার কি কারন? তুমি হয়তো জানিতে আমি তোমারো লাগি উন্মাদ ছিলম।
তোমারো কাব্যিক কথন মোর বোধগম্য হয় নহে। মোর সাধ ছিলো তোমারো সাথে দিবা-রজনী কাটাইবার। মুক্তির কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হইলো বোধহয় সে ক্রন্দন করিতেছে।
তাহার ক্রন্দিত স্বরে বলিল, মোরও সাধ ছিল তোমার সহিত থাকিবার। কিন্তু! কিন্ত! কিন্তু! কিন্তু!কি? মোরে কি তাহা ব্যক্ত করা যায়? কিছু কথন না হয় অপ্রকাশ্য থাক। তাহা থাক!
তুমিতো মোরে ভালবাসিতে এই কথন জানিতে পারিলে মোর পরান নিথর হয়।মোর ভালবাসার এখন কোনরুপ মূল্য আছে? আছে ভইকি। নাই! নাই! কোন মূল্য নাই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলিয়াছেন,"ভালবেসে যদি সুখো নাহি তব কেন, তব কেন মিছে ভালবাসা?" মিছে ভালবাসার খুবই প্রয়োজন আছে যদি কেউ তাহাতে সুখ পাই।
তোমারো মিছে ভালবাসায় আমি সুখ পাইয়াছি। এই সুখ লইয়া না হয় মোর ইহজীবন কাটাইয়া দিব। সে কোন কথন বলিতে পারিলনা সে শুধুই ক্রন্দন করিতে লাগিল।
আমি তাহার ক্রন্দন সহিতে না পারিয়া যোজনটি ছিন্ন করিলাম। সে মোরে ভালবাসে? যদি মোর প্রণয় বিশুদ্ধ তব সে ফিরিয়া আসিবেই। আমি না হয় তাহার জন্য চাতক পাখির মতন অপেক্ষা করিব।