- 0
- 0
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: খালাস চেয়ে ৯ জনের আপিল

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৯ আসামি আপিল দায়ের করেছেন।
বুধবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আপিলকারিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ১৪০ টি ভলিয়মে মোট ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫ পৃষ্ঠার আপিল তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৫ হাজার পৃষ্ঠার ১৪ সেট আপিল আজকে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। আপিলে আমরা খালাস চেয়েছি। কারণ যে ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এদেরকে সাজা দিয়েছে তা ভিত্তিহীন। এই ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয় না। আশা করি সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের খালাস দেবেন।
আপিল ফাইল করার পাশাপাশি আজকে প্রধান বিচারপতির কাছে একটি দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে পেপারবুক প্রদান থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। কেননা এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ একটি মামলা। যেখানে লাখ লাখ পৃষ্ঠার পেপারবুক তৈরি করে আপিল দায়ের করা দরিদ্র আসামিদের ক্ষেত্রে কোন ভাবেই সম্ভব হবে না।
আজকে যে আপিল দায়ের করা হয়েছে তাতে এই ৯ আসামির আপিল প্রস্তুত করতেই প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ কারনে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছি। আশা করি প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিবেচনা করে সকল আসামিকে আপিল দায়েরের সুযোগ দেবেন।
যে ৯ আসামি আপিল দায়ের করেছেন তারা হলেন-সিপাহী কামাল মোল্লা, সিপাহী আব্দুল মুহিত, সিপাহী মনিরুজ্জামান, হাবিলদার ইউসুফ আলী, হাবিলদার আনিসুজ্জামান, নায়েক আবু সাঈদ আলম সাঈদুর রহমান, নায়েব সুবেদার ফজলুল করিম, সিপাহী বজলুর রশীদ ও সুবেদার শহিদুর রহমান।
এর আগে হাইকোর্টে খালাস পাওয়া ৭৫ জন এবং সাজা কমে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৮ আসামিসহ মোট ৮৩ জনের ক্ষেত্রে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে রাষ্ট্রপক্ষ। তিন বিচারপতির সমন্বয়ে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে।
দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহ চলাকালে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামির সংখ্যা হয় ৮৫০ জন।
এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বিচার চলার সময় বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়।
মামলার আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীকেও দণ্ড দেয়া হয়। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মারা যান।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত) কারাদণ্ড দেন। এছাড়া ২৭৮ জনকে খালাস এবং ৪ জন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পান।
রায়ে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা চেয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
এ জন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
রক্তাক্ত ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়।